কিভাবে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়?
আমাদের দেশের একটি সবচেয়ে বড় সমস্যা বর্তমানে বেকারত্ব। এই বেকারত্ব দূর করার
সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা।
ফ্রিল্যান্সিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ঘরে বসে উপার্জন করাকে করে তুলেছে অনেক
সহজতর। আসুন জেনে নেই কিভাবে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়?
অনলাইনে ঘরে বসে এর বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ডিজিটাল
মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, সোশ্যাল মিডিয়া
মার্কেটিং সহ আরো বিভিন্ন উপায়ে ঘরে বসে সহজে আয় করা যাবে।
ভূমিকা
বর্তমান যুগ আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। অনেকের মনে এই প্রশ্ন যে,
কিভাবে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়? এখন সকল কাজ হয়ে গেছে ইন্টারনেট ভিত্তিক।
এজন্য কাজ খোঁজার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাসায় বসে বিভিন্ন
উপায়ে আয় করা যায়। যাকে বর্তমানে বলা হয় "ওয়ার্ক ফ্রম হোম"।
ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয়
আপনি কি জানেন, কিভাবে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়? ঘরে বসে আয় করার সর্বোত্তম
পন্থা হলো ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং হল মুক্ত পেশা আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেই
বিষয়ে নিয়ে আপনি বাসায় বসে কাজ করতে পারেন এবং উপার্জন করতে পারেন। অফিসে
যেয়ে কাজ করার প্রয়োজন হয় না ঘরে বসে নিজের স্বাধীনতা অনুযায়ী নিজের সময়
মত কাজ করা যায় এবং যতটুকু কাজ করবেন সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবেন।
বিভিন্ন
ধরনের ওয়েবসাইটে আপনি আপনার দক্ষতা দ্বারা কাজের সুযোগ পেতে পারেন। যেমন:
ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, এড কম্ব এমন বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস। এ সকল
মার্কেটপ্লেসে ঘরে বসে কাজ করে বিভিন্ন ব্যাংকিং এবং অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম
দ্বারা উপার্জন করা সম্ভব। আপনি চাইলে ফাইবারে প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করে গিগ
রিসার্চ, গিগ এসিও এবং গিগ মার্কেটিং করতে পারেন।
তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং
মার্কেটপ্লেসে ওয়েব ডেভলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, অ্যাপ মার্কেটিং ও
ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ইমেইল মার্কেটিং, ফেসবুক মার্কেটিং,
সাইবার সিকিউরিটি এবং ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে কাজ করতে পারেন।
বিভিন্ন জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলোর নিচে দেওয়া হল:
- আপ ওয়ার্ক: অনলাইনে আপওয়ার্ক একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। বিভিন্ন দেশের ক্লাইন্ট ফ্রিল্যান্সার দের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের সাথে অডিও ভিডিও কলের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের যোগ্যতা যাচাই করে তাদেরকে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। ক্লাইম তার চাহিদা অনুযায়ী জব পোস্ট করে। ফ্রিল্যান্সার সেই ক্লায়েন্ট এর কাজগুলো করে দেয়। এর জন্য আপওয়ার্ক 20% কমিশন কেটে নেয়। কাজ শেষে বিভিন্ন পেমেন্ট মাধ্যমে টাকা নেওয়া যায়।
- ফাইবার: বিশ্বের অন্যতম একটি বড় মার্কেটপ্লেস হলো ফাইবার। বহু সংখ্যক মানুষ ভার্চুয়ালি ভাবে ফাইবারে কাজ করে থাকে। ফ্রিল্যান্সার দেরকে ফাইবারে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ফাইবারে প্রধান উপকরণ হলো গীক যা দ্বারা সার্বিক সেলিং এর কাজ করা হয়। আপনি যে ধরনের সার্ভিস দিতে পারবেন তার জন্য প্রতিটি আলাদা গীগ সাজাতে হয় এবং গিগে সার্ভিসের নাম, বর্ণনা, মূল্য ও সময়কাল উল্লেখ করতে হয়। এখানেও কাজের জন্য 20% হারে ফাইবার কমিশন কেটে নেয়। কাজ শেষে পেপাল, পেয়ে ওনার সহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা তোলা যায়।
- ফ্রিল্যান্সার : ফ্রিল্যান্সারদের আরও একটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার। এখানে কনটেস্ট আকারে এবং প্রজেক্ট আকারে ক্লাইম জব পোস্ট করে থাকে। কনটেস্ট আকারে জ ব প্রকাশ করা হলে সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে সেই সময়ের মধ্যে কিছু সংখ্যক ফ্রিল্যান্সাররা অংশগ্রহণ করে কাজ সম্পন্ন করে দেয়। আর প্রজেক্ট আকারে জব পোস্ট করা হলে বিট করার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়। ঘন্টা চুক্তি অনুযায়ী প্রজেক্ট কাজ করতে পারে। Freelancer এর জন্য ১০% করে কমিশন নিয়ে নেয়। কাজ সম্পাদন করার পর আপনি নির্দিষ্ট পেমেন্ট সিস্টেমে টাকা উত্তোলন করতে পারেন।
- ফ্রীলান্স রাইটিং: ফ্রিল্যান্সারেটিং মূলত কনটেন্ট বা আর্টিকেল রাইটিং সংক্রান্ত মার্কেটপ্লেস। যাদের লেখালেখি সম্পর্কে পর্যাপ্ত দক্ষতা আছে তারা এ কাজটি খুব সহজে এবং সুবিধা জনক ভাবে করতে পারে। এখানে আপনি নিজের কনটেন্ট নমুনা হিসেবে ক্লাইন্টকে দেখিয়ে ক্লাইন্টকে খুশি করাতে পারলে সেখান থেকে কাজ পেতে পারেন। এবং কনটেন্ট লিখে তা বাইয়ারদের কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
- কোডেবল : যারা সাধারণত প্রোগ্রামিং বা ওয়েব developing এর কাজ করে তাদের জন্য একটি উত্তম মার্কেটপ্লেস হলো কোডেবল। এখানে শুধু প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত কাজ করা হয়। ক্লাইন্ট চাইলে সরাসরি ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করে তার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করিয়ে নিতে পারে। কোডেবল ১৭.৫% হারে কমিশন কেটে নিয়ে থাকে।
- ক্রাউড সোর্স: এই মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য ট্রেনিং এবং টেস্ট বাধ্যতামূলকভাবে করা লাগে। প্রতিটি কাজ দুই ধাপে করা হয় । কোয়ালিটি চেক করে সকল কাজ করা হয়। শুধুমাত্র দক্ষ ফ্রীলান্সারদের জন্য এই মার্কেটপ্লেসটি উপযুক্ত। ক্রেডিট কার্ড, পেপাল ইত্যাদি মাধ্যমে আপনি এখান থেকে পেমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ব্লগিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে আয়
বর্তমানে আয়ের একটি সহজপন্থা হলো ব্লগিং। ব্লগের মাধ্যমে আপনি ফ্রি সাইট তৈরি
করে এখানে আপনার পছন্দ মত বিভিন্ন অডিও, ভিডিও , টেক্সট সহ বিভিন্ন ধরনের
কনটেন্ট আপলোড করতে পারেন। পরবর্তীতে আপনার সাইটে অর্গানিক ভিউ বেশি আসলে
এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করতে পারেন।
এডসেন্স অ্যাপ্রুভ হয়ে গেলে বিজ্ঞাপনের
দ্বারা সেখান থেকে ঘরে বসেই আয় করা যায়। আপনি চাইলে আপনার ব্লগার এ এফিলিয়েট
মার্কেটিং, সাবস্ক্রিপশন, কোচিং বিভিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারেন।
আরো পড়ুন: কম খরচে সাজেক যাওয়ার উপায়।কখন যাবেন, কিভাবে যাবেন ,সাজেক ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
আপনার ওয়েবসাইট যদি জনপ্রিয় হয় তাহলে অনেক বিজ্ঞাপন দাতারা আপনার ওয়েবসাইটে
বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অর্থ প্রদানে রাজি থাকবে। ফলশ্রুতিতে আপনি বিজ্ঞাপন
দেখিয়ে উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি
আপনার ওয়েবসাইটে অন্যদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তা বিক্রি করতে পারলে সেখান
থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেতে পারবেন।
তাছাড়া আপনি ব্লগিং বিষয়ে অভিজ্ঞ হলে
সেই সংক্রান্ত কোচিং বা কোর্স করিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। তাছাড়া আপনি
ব্লগার এ পাঠকদের পছন্দমত কনটেন্ট লিখে সেখান থেকে ভিউ অর্জন করতে পারলে তা
থেকে ইনকাম করতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্লগ লিখতে পারেন যেমন: খবর,
খাদ্য, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, মোটিভেশন, খেলাধুলা, নাটক ও চলচ্চিত্র,
গল্প ইত্যাদি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয়
ব্যবসা করার জন্য প্রচার প্রচারণার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো অনলাইন। অনলাইনে খুব
সহজেই পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা যায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি
আপনার নিজের ওয়েবসাইটে অন্যদের বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করার মাধ্যমে
নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেতে পারেন। আপনার যদি youtube চ্যানেল facebook বা
instagram একাউন্ট থাকে তাহলে আপনি অ্যাপ্লিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব সহজে
উপার্জন করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ অনলাইন প্লাটফর্মে আপনি যেকোনো
গ্রাহকদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দিয়ে প্রমোশন করতে পারবেন। যখন আপনার
ওয়েবসাইট বা চ্যানেলে কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে প্রচারণা করেন তখন সেখানে
প্রোডাক্টের লিঙ্ক দিয়ে দেন। এই লিংকের মাধ্যমে ক্লিক করে কোন ব্যক্তি যদি
প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটি ক্রয় করে তাহলে আপনি তার জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে
কমিশন বা মুনাফা পাবেন।
এই কমিশন আপনি প্রতিবার সেবা বা পণ্য বিক্রয়ের জন্য
পাবেন।সহজ ভাষায় বলতে গেলে এটা হল এমন এক ধরনের চুক্তি যেখানে আপনি বিক্রেতার
পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে। এজন্য আপনার
উচিত সঠিক পণ্য বা সার্ভিস নির্বাচন করা।
যে সকল পণ্য বা সার্ভিসের চাহিদা বেশি সে সকল পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদান করা। সঠিক
নিজ গঠন করা এবং নিজ অনুযায়ী ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরি করা জানা লাগবে। আজকাল
অনেক ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক রয়েছে যেমন: Flipkart affiliate
program, Amazon affiliate program, go Daddy, hostgator affiliate network।
আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সের হিসেবে গ্রাহকদের কাছে পণ্যের
প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন। ব্লগিং সাইট তৈরি করে নিজের কনটেন্ট পাবলিশ করে
প্রচারণা করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের সার্চ ইঞ্জিনের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নির্দিষ্ট
সংখ্যক গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
কোন পূর্ণ বা সেবার রিভিউ তৈরি করে
প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানোর
মাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাস সেবা
মার্কেটে বিক্রয় করে লাভবান হওয়া যায়। যেমন: মোবাইল, ডোমেইন এবং হোস্টিং,
বই, ওয়ার্ডপ্রেস থিম, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, জামা কাপড় ইত্যাদি। আপনি
চাইলে সহজে নিজের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতে পারেন।
এডসেন্স এর মাধ্যমে ঘরে বসে আয়
এডসেন্স হলো গুগলের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম যেখানে মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের
কনটেন্ট পাবলিশ করার মাধ্যমে উপার্জন করার সুযোগ পেয়ে থাকে। আপনার ওয়েবসাইটে
থাকা বিভিন্ন ধরনের কনটেন্টের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে আপনাকে এডসেন্স
বিজ্ঞাপন প্রদানের অনুমতি দেয় যেখান থেকে আপনি ইনকাম করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে খুব সহজেই আপনি ঘরে বসে প্রচুর
টাকা আয় করতে পারেন।
গুগল এডসেন্স এর কাজ হল বিভিন্ন ধরনের ব্লগ, ওয়েবসাইট,
ভিডিও বা অ্যাপে নিজেদের বিজ্ঞাপন দেখানো। যারা নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন দিতে চাই গুগল এডসেন্স তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পাবলিশারদের কিছু
অংশ দেয় বাকিটা নিজের কাছে রেখে দেয়। এরফলে বিজ্ঞাপন দাতার, গুগল এডসেন্সের
এবং পাবলিশারের সকলেরই অর্থ উপার্জন হয়।
আরো পড়ুন: এক মাসে ওজন কমানোর সহজ ও সঠিক উপায়।
যখন আমরা কোন ওয়েবসাইট বা ব্লক বা ইউটিউব এ ভিডিও কনটেন্ট আকারে দিয়ে থাকি
তখন সেখানে দেখানো বিজ্ঞাপন গুলোতে কেউ যদি ক্লিক করে তাহলে সেখানে ভিউ এর জন্য
কিছু টাকা পাওয়া যায় । এই টাকা ১০০ ডলার যখন হয়ে যায় তখন গুগল এডসেন্স সেই
টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে দেয়।
সঠিকভাবে এসিও করে আপনার ব্লগার বা
ইউটিউব চ্যানেল যদি সকল নিয়ম নীতি অনুযায়ী পরিচালিত করা হয় তাহলে আপনি
এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করতে পারেন। এপ্লাই অ্যাপ্রুভ হয়ে গেলে আপনি গুগল
এডসেন্স পেয়ে যাবেন এবং সেখান থেকে উপার্জন করা শুরু করতে পারবেন। আপনার
কনটেন্ট বা ভিডিও অনেক মানুষ দেখবে। এই দেখার ফলে এবং সেখানে প্রচার করা
বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার মাধ্যমে এডসেন্স আপনাকে টাকা দিবে।
এক্ষেত্রে কিছু
নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। আপনি যদি অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে আপনাকে ভালো
মানের ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এখানে ভালো মানের পূর্ণ সামগ্রী
বিজ্ঞাপন প্রদান করতে হবে। দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী কনটেন্ট এবং বিজ্ঞাপন
প্রচার করতে হবে ও সঠিক কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। Google এডসেন্স এর সকল
নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
ইউটিউব থেকে ঘরে বসে আয়
বর্তমানে অনেক সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সের ইউটিউব থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ
উপার্জন করছে। ইউটিউবে চ্যানেল খুলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আপলোড করে
উপার্জন করে থাকে। আপনি চাইলে মানসম্মত ও রুচিশীল বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ইউটিউব
চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন।
খাবারের ভিডিও, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিডিও,
খেলাধুলার ভিডিও ও বিভিন্ন প্রকারের ভিডিও। এ সকল ভিডিওতে ভিউ হলে এবং
সাবস্ক্রাইবার এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেখান থেকে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণে আয়
করতে পারবেন। সারা বিশ্ব জুড়ে প্রায় ২০০ কোটির বেশি মানুষ ইউটিউবে
প্রতিনিয়ত ভিডিও দেখে থাকেন।
ইউটিউব শুধু বিনিময়ের মাধ্যমে নয় এখান থেকে
আয় এর ও ব্যবস্থা রয়েছে। জনপ্রিয় এই প্লাটফর্ম থেকে অনেক ইউটিউবাররা মাসে
কয়েক লক্ষ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ইনকাম করে থাকেন। এই ইউটিউবের ফলে অনেক ছেলে
মেয়ের বেকারত্ব দূর হয়ে তারা ইনকাম করতে শুরু করেছে ঘরে বসেই।
ইউটিউবে প্রচুর পরিমাণে প্রতিযোগী বিদ্যমান রয়েছে । আপনি যদি দর্শকের
পছন্দ অনুযায়ী মানসম্মত ভিডিও বা কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তাহলেই আপনার
দর্শকের সাথে সঠিক যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে। একটি
ইউটিউব চ্যানেল থেকে ইনকামের জন্য অন্তত ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
১২
মাসে যদি আপনি ৪০০০ ঘণ্টা ভিউ পান আপনার ভিডিওতে তাহলে আপনার ইনকাম শুরু হয়ে
যাবে। তাছাড়া আপনি আপনার ভিডিওতে কোন বিজ্ঞাপনের লিংক দিলে সেখানে যদি কেউ
ক্লিক করে সেখান থেকে আপনি অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করতে পারেন। আপনি চাইলে লাইভ
স্টিমের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে উপার্জন করতে পারেন। ইউটিউবে আপনি ভিডিও থেকে,
বিজ্ঞাপন থেকে, এফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে এবং স্পন্সরশিপ এর মাধ্যমে আয়
করতে পারবেন।
কনটেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে আয়
বর্তমানে কনটেন্ট লিখে / আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে অনলাইনে খুব সহজে আয়
করা যায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের প্রচার ও বিক্রয় করা যায়।
তাছাড়া পাঠকদের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট লিখে পাবলিশ করা
হয়।
এবং এ সকল কনটেন্ট ওয়েবসাইটে ভিউ এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
বর্তমানে কনটেন্ট রাইটিং ফ্রিল্যান্সিং জগতের মধ্যে সবচাইতে ভালো সেক্টর
যেখানে আপনি নিজের দক্ষতা ও সময় দিয়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে
পারবেন এবং এতে কোন ইনভেসমেন্ট বা বিনিয়োগের দরকার পড়ে না।
কনটেন্ট রাইটিং হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করে সেই বিষয়ে এর উপর
বিস্তারিতভাবে লেখা এবং পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এই কনটেন্ট আপনি আপনার
নিজস্ব ওয়েবসাইটে বা কোন ক্লাইন্ট, এজেন্সি বা কোম্পানি অথবা বিভিন্ন ধরনের
মার্কেটপ্লেসে ও বায়ারদের কাছে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
এই
কনটেন্ট লেখার ক্ষেত্রে বেসিক অন পেজ এসইও মেনে চলতে হয়। কনটেন্ট এর টাইটেল
হেডিং সাবহেডিং আকর্ষণীয়ভাবে দিতে হবে এবং ফরমেটিং করতে হবে এবং সঠিকভাবে
কনটেন্ট এর মধ্যে কিওয়ার্ড প্লেস করা লাগবে। পাঠকদের সুবিধার্থে গুছিয়ে
কনটেন্ট লিখতে হবে। একদিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কনটেন্ট অন্য কারো কাছ থেকে
কপি বা চুরি না করা হয় কম্পিউটারকে নিজস্ব ধ্যান ধারণা থেকে লিখতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয়
মিডিয়া মার্কেটিং বর্তমানে ঘরে বসে আয়ের একটি অন্যতম উৎস। ফেসবুক টুইটার
প্রিন্টারেস্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বেশি থাকলে
সেখানে বিভিন্ন পণ্যের প্রচার-প্রচারণার জন্য অর্থ পাওয়া যায়। এবং ঘরে বসে
খুব সহজেই আয় করা যায়। সাধারণত অর্গানিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং,
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং এবং পেইড সোশ্যাল মিডিয়াম
মার্কেটিং সহ আরো বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিং রয়েছে।
আপনি বিভিন্ন কৌশলে লাইভ
স্ট্রিমিং বা কনটেন্ট কম্পিটিশন এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার
করতে পারেন। যেমন কোন বিজ্ঞাপন পোস্ট করে বা স্টোরি দেওয়ার মাধ্যমে বা রিল
শেয়ার করে অথবা ভিডিও বা লিংক এর মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা করতে পারেন ।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচুর
পরিমাণে পপুলার হওয়া লাগবে। facebook, twitter, instagram সহ বিভিন্ন ধরনের
সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে আপনি বিভিন্ন ব্যবসায়ের পণ্য বাসেবার
প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন এবং সেখান থেকে বিক্রয় করতে সক্ষম হলে নির্দিষ্ট
হারে কমিশন উপার্জন করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে
ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, এবং গ্রাহকের সাথে একটি সুসম্পর্ক তৈরি
করা হয় এবং গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এভাবে সোশ্যাল মিডিয়াম মার্কেটিং
সঠিকভাবে করতে পারলে পণ্য বা ব্যান্ড অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যা বিক্রয়
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধি করে।
ওয়েবসাইট তৈরি করে ঘরে বসে আয়
নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে ডোমেইন-হোস্টিং কিনে সেখানে বিভিন্ন ধরনের টপিকে
আর্টিকেল পাবলিশ করে গুগল এডসেন্স থেকে অ্যাপ্রুভাল নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখানোর
মাধ্যমে প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। বর্তমানে কোন তথ্য সহজে পাওয়ার জন্য
আমরা যেকোনো সার্চ ইঞ্জিন বা ব্রাউজারে লিখে সার্চ করলেই তা অল্প সময়ের
মধ্যেই পেয়ে যায়। এই সমস্ত তথ্যবার রেজাল্ট যে পেজগুলোতে আসে তারা
প্রত্যেকটি এটি একটি ওয়েবসাইট।
বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট হয়ে থাকে
ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট, প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট,
ব্লগিং ওয়েবসাইট ও আরো বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করতে হয়
এর জন্য আনুমানিক ৫০০ থেকে ১২০০ পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
তাছাড়া একটি ভালো
মানের হোস্টিং কেনার জন্য 1200 থেকে 3500 টাকার মধ্যে অনেক ভালো মানের
হোস্টিং পেয়ে যাবেন । আপনি চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস, ব্লগার বিভিন্ন ধরনের
ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন আপনার প্রয়োজনও চাহিদা অনুসারে । ওয়েবসাইট
তৈরি করার পর সেখানে ভালো মানের কনটেন্ট, ভালো মানের ইমেজ এবং এমন ধরনের
বিষয়বস্তু থাকা লাগবে যা গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণের সহায়তা করে ফলে
ওয়েবসাইটে ভিজিটরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
আপনি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি সিলেক্ট
করে সে ক্যাটাগরির ওপর বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট বা পোস্ট লিখতে পারেন। তাছাড়া
আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং, নিজস্ব প্রোডাক্ট বিক্রয়, ইমেইল লিস্ট, প্রোডাক্ট
রিভিউ সহ আরো বিভিন্নভাবে ইনকাম করতে পারেন ওয়েবসাইট থেকে।
গ্রাফিক ডিজাইনিং শিখে ঘরে বসে আয়
গ্রাফিক্স ডিজাইনের দক্ষ হলে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে ইমেজ ডিজাইনিং ভিডিও
ডিজাইনিং টেমপ্লেট ডিজাইনিং সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে দিয়ে তার মাধ্যমে আপনি
আয় করতে পারেন। অনলাইনে এমন অনেক ধরনের মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে গ্রাফিক্স
ডিজাইনের চাহিদা এবং মূল্য অনেক বেশি। গ্রাফিক ডিজাইনিং বলতে আপনি
কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ব্যানার সহ প্রোডাক্ট ডিজাইন ও
কাস্টমাইজ করতে পারেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার যেমন: এডোবি ফটোশপ, এডোবি
ইলাস্ট্রেটর, থ্রিডি ডিজাইন ম্যাক্স সহ আরো অনেক ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে।
আপনি চাইলে কোন প্রতিষ্ঠানে কোর্স করে অথবা ইউটিউবে ভিডিও দেখার মাধ্যমে
ফ্রিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখতে পারেন।
গ্রাফিক ডিজাইনের মাধ্যমে আপনি
যেকোনো ধরনের লোগো ডিজাইন করে পঞ্চাশ থেকে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত ইনকাম করতে
পারবেন । তাছাড়া গ্রাফিক ডিজাইন এর মাধ্যমে ফ্রন্ট ডিজাইন করা টি শার্ট
ডিজাইন করা সহ বিভিন্ন ধরনের টেমপ্লেট ডিজাইনিং ও বিক্রয় করা হয়। বর্তমানে
বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিক ডিজাইনের চাহিদা অত্যন্ত বেশি।
লেখক এর মন্তব্য
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান যুগে মেধা
দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে কোন ব্যক্তি ঘরে বেকার বসে থাকবে না। কোন না কোনভাবে
তার উপার্জনের পথ সৃষ্টি হবে। এই উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো অনলাইন ইনকাম।
সাধারণ স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ও ল্যাপটপ দিয়ে ঘরে বসে বিভিন্ন মাধ্যমে
অনেক সহজে ইনকাম করা সম্ভব।
আশা করি, কিভাবে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়? এই
সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। অনলাইনে ইনকামের বিভিন্ন সেক্টর
রয়েছে। স্কিল ডেভেলপের মাধ্যমে সেসব সেক্টরের কাজ করার জন্য পারদর্শিতা
অর্জন করার মাধ্যমে। যেকোনো সেক্টরে কাজ করে আয় করা সম্ভব।
এর ফলে বেকারত্ব
হ্রাস হবে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এবং দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক
উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি আসবে। "কিভাবে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়?"- এই সম্পর্কে
আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে মন্তব্য করুন।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url