টবে ফুল গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা
টবে ফুল গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করব। অনেকে শখের বসে ফুলের গাছ লাগায় আবার অনেকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য যায় হোক না কেন, সঠিকভাবে ফুল গাছ লাগানোর পদ্ধতি ও পরিচর্যার সম্পর্কে জানা জরুরী। বর্তমান দিনে ফুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়তে। ফলে ফুল চাষ করে অনেকে লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া অনেকে ছাদের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছাদে অনেক ধরনের ফুল গাছ লাগিয়ে ছাদবাগান তৈরি করে।
বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে অনেকে ফুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করা হয়। গোলাপ ফুল, গাঁদা ফুল, রজনীগন্ধা ফুল, জবা ফুল, বেলি ফুল, গন্ধরাজ ফুল, হাসনাহেনা ফুল, জুঁইফুল সহ আরো অনেক রকমের ফুল চাষ করা হয়।
টবে ফুল গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা
প্রায় প্রতিটি মানুষেরই ফুল পছন্দ। একেক জন একেক রকমের ফুল পছন্দ করে। প্রতিটি ফুলের রং বশিষ্ট্য আলাদা আলাদা হয়। এজন্য সকলের পছন্দের ফুল ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। ফুল চাষ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় মাথায় রাখতে হয়। ফুল চাষ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা জরুরী। ফুল চাষের ক্ষেত্রে ফুলের বীজ রোপনের সময়, ফুলের জমি নির্বাচন, জমিতে বেড়া দেওয়া, চারা রোপন করা এবং ফুলের টবে সার দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে হয়। আসুন, আমরা তবে ফুল গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জেনে নিই।
- টবে ফুল রোপনের সময়: অধিকাংশ ফুলের বীজ বা চারা অথবা কলম লাগানোর সঠিক সময় হল আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। এই মাসের মধ্যেই সাধারণত ফুলের বীজ বা চারা রোপন করা হয়ে থাকে। এই সময়টুকু হলো ফুল গাছ রোপনের জন্য উপযুক্ত সময়।
- সঠিক টব ও জমি নির্বাচন: টবে ফুল চাষের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ সাইজ থাকা লাগবে। অতিরিক্ত ছোট তবে ফুল গাছ বৃদ্ধি হতে বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য সাধারণত ফুল গাছের জন্য বড় ধরনের টব নির্বাচন করা উচিত। এবং টবে ফুল গাছ চাষের উপযুক্ত দো আঁস মাটির ব্যবহার করা উচিত। এবং টবটি এমন স্থানে রাখা উচিত যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস পৌঁছানোর ব্যবস্থা থাকে। টপ যদি উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়, তাহলে টবের চারিপাশে বাঁশ কার্ড বা অন্যান্য যে কোন বস্তু দিয়ে শক্ত করে বেড়া দিয়ে দেওয়া উচিত। বেড়া দেওয়ার ফলে আশপাশের কোন গবাদি পশু বাগানে ঢুকে টবের ক্ষতি করতে পারবে না।
- চারা ও বীজ সংগ্রহ: গ্রামে বা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নার্সারি দেখতে পাওয়া যায়। নার্সারিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের ফুলের চারা, কলম। তাছাড়া আশেপাশে যদি কোন কৃষিসম্প্রসারণ অফিস থাকে, সেখানে যোগাযোগ করার মাধ্যমে ফুলের চারা সংগ্রহ করা যায়।
- টবে ফুল গাছের জন্য মাটি তৈরি ও সার প্রয়োগ: তবে ফুল গাছ লাগানোর পূর্বে ফুল গাছের জন্য মাটি তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী। ফুলের চারা রোপনের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ দিন পূর্বে মাটি ঝুরঝুরে করে ফুল চাষের জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে করার পর মাটিতে বিভিন্ন ধরনের সার মেশানো লাগবে। জৈব সার বা পচা গোবর দিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করা যেতে পারে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য মাটির সঙ্গে হাড়ের গুড়া, ইউরিয়া খৈল, এমপি এবং চাপাতির উচ্ছিষ্ট্যাংশ ও ছাই মিশিয়ে নিলে ভালো হয় । ফুলের গাছের মাটি তৈরির ক্ষেত্রে মাটিতে জৈব সার ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া উচিত।
- টবে চারা রোপন: অনেকে শখের বসে বা বাণিজ্যিকভাবে টবে ফুলের চাষ করে থাকে। তবে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করা যায়। উল্লেখযোগ্য কিছু ফুল হলো, ডালিয়া, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাদা, রজনীগন্ধা, কাটা মুকুট, জবা, রেইন লিলি, রঙ্গন ইত্যাদি। এ সকল ফুল টবে লাগানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এমন ধরনের চারা রোপন করা উচিত যে চারা হবে নিরোগ ও স্বাস্থ্যবান। চারা রোপনের পর চারার গোড়ায় মাটি শক্তভাবে ঠেসে দিতে হবে এবং হালকা করে গাছের গোড়ায় প্রয়োজন মত পানি দিয়ে দিতে হবে। এবং প্রয়োজন ভেদে চারার পাশে খুঁটি বেছে দেওয়া যায়। খুঁটি বেঁধে দিলে সাধারণত ফুল গাছে চারাটি সোজা হয়ে থাকতে পারে।
টবে লাগানো ফুল গাছের পরিচর্যার নিয়ম
- অনেক সময় ফুল গাছের গোড়ার চারিপাশে অনেক রকম আগাছা জন্ম নেয় থাকে। এই সকল আগাছা গাছের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে। এজন্য নিড়ানি দিয়ে আগাছাগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এবং ফুলের গাছের গোড়া মাঝে মাঝে এভাবে আলগা করে দেওয়া উচিত। এর ফলে গাছের দ্রুত বৃদ্ধি হবে।
- সময় মত টবে পানি দিতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে পানি দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত পরিমাণে পানি দিলে গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকবে। গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে মুক্ত করার জন্য হিফটে কোন বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে মুক্ত করার জন্য হেপটাক্লোর ৪০ পরিমাণ অনুযায়ী দেওয়া লাগবে। এতে বিভিন্ন ধরনের পিপড়া, মাকড়সা সহ অন্যান্য প্রকার আক্রমণ থেকে গাছ রক্ষা পাবে। তাছাড়া পিঁপড়ার উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ম্যালাথিওন প্রয়োগ করতে পারেন।
- ফুল গাছগুলোর যত্ন নিতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী মাঝে মাঝে পুরনো বা রোগা ডালগুলো ছেটে ফেলে দিতে হবে।
টবে কোন ধরনের গাছ লাগানো যায়
ইতোপূর্বে, আমরা টবে ফুল গাছ লাগানো সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো টবে যে সকল গাছ লাগানো যাবে। অনেকের কাছে টবে গাছ লাগানো একটি শখ। এই শখের বসে অনেকে ছাদের উপর ছোটখাটো একটি ছাদ বাগান করার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকে জানে না যে টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো যায়। টবে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভেষজ গাছপালা লাগানো যায়। তুলসী, পুদিনা পাতা টবে লাগানোর জন্য উপযুক্ত গাছ। এ সকল গাছ সহজে বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয়। ভেষজ গাছ লাগালে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে, নিয়মিত গাছগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না।
টবে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি লাগানো যেতে পারে। বেগুন, টমেটো, মরিচ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি টবে লাগানো যায়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের ছোট ফলের গাছও টবে লাগানো যায়। তাছাড়া ঋতু ভেদে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো যায়। যেমন গরমের সময় জিনিয়া, সূর্যমুখী, দোপাটি, রজনীগন্ধা লাগানো যেতে পারে। বর্ষাকালে বেলী, জুই, পত্রলেখা, চাপা লাগানো যেতে পারে। শীতকালে গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা এ সকল গাছ লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া জবা, কামিনী, নয়ন তারা, সন্ধ্যা মালতি এগুলো সারা বছর লাগানো যেতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
ফুল সকলেরই পছন্দের একটি গাছ। ফুল গাছ লাগানোর পূর্বে ফুল গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আজকে আমরা টবে ফুল গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জেনেছি। যারা গাছ প্রেম তারা বিভিন্ন মৌসুমে ছাদে টবে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের উষ্ণতা কমাতে অবদান রাখতে পারে। আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি করে গাছ লাগানো।
বর্তমানে যেভাবে গরমের প্রভাব পড়ছে, এই অবস্থায় যত বেশি গাছ লাগানো যাবে পরিবেশের জন্য তত ভালো হবে। কারণ গাছ লাগানোর ফলে ছায়া বাড়বে, পরিবেশের উষ্ণতা কমবে, বৃষ্টিপাত বাড়বে। ফলশ্রুতিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এজন্য আমাদের উচিত বৃক্ষ নিধন রোধ করা এবং অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো। গাছ লাগানো সম্পর্কে যেকোনো তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনে আপনার মতামত দিন। আশা করি আমার পোস্ট পড়ে আপনি আপনার কাঙ্খিত তথ্য পেয়েছেন। কষ্ট করে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url