চুল পড়া ও খুশকি কমানোর উপায় - চুলে খুশকি হওয়ার কারণ

আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হল চুল পড়া ও খুশকি কমানোর উপায় এবং চুলে খুশকি হওয়ার কারণ। বর্তমানে অনেকের কাছে একটি বড় সমস্যা হলো চুল পড়ে যাওয়া এবং মাথায় খুশকি হওয়া।মাথায় সাধারণত সাদা আশেঁর মতো গুড়াযুক্ত পদার্থ জমে যাওয়াকে ‌ খুশকি বলা হয়ে থাকে। সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার করে এবং খুশকি কমানোর জন্য ঘরোয়া প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত চুলে অতিরিক্ত ধুলাবালি বা ময়লা লাগার কারণে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে।
শুষ্ক ত্বক, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার সহ পর্যাপ্ত শ্যাম্পু না ব্যবহার করার কারণে খুশকি হয়ে থাকে। এবং এই খুশকির কারণে অনেক সময় চুল ঝরে যায়। কালোজিরা, নারিকেল‌‌ তেল, নিম পাতার রস এবং বিভিন্ন উপকরণ দ্বারা চুল পড়া কমানো সম্ভব।চলুন আজকে চুলে খুশকি হওয়ার কারণ এবং চুল পড়া ও খুশকি কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে নিই।

ভূমিকা

বর্তমানে অল্প বয়সেই অনেকের মাথার চুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণ হলো খুশকি। মাথার ওপরের অংশের মৃত কোষগুলোকে সাধারণত খুশকি বলা হয়। চুলের যত্ন না নেওয়া, চুলে অতিরিক্ত ময়লা জমে যাওয়া এবং খাদ্যাভ্যাস সহ বিভিন্ন কারণে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। এ সকল খুশকি দূর করার জন্য মানসম্মত পণ্য ‌ ব্যবহার করা উচিত এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথায় বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি প্রলেপ লাগানো উচিত। এজন্য আমাদের চুল পড়া ও খুশকি কমানোর উপায় সম্বন্ধে জানা প্রয়োজন।

চুল ঝরে পড়ার কারণ

চুলের সঠিকভাবে যত্ন না নেওয়া এবং চুল পাতলা হওয়ার কারণে অনেকের চুল অল্প বয়সেই ঝরে পড়ছে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টা পর্যন্ত চুল ঝরে পড়া স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা হয়। মাথায় হাত দিয়ে এক মুঠ চুল ধরে টান দিলে, মোট চুলের ‌ এক চতুর্থ অংশই যদি উঠে আসে ‌ তাহলে তা চিন্তার কারণ। আসুন জেনে কি কি কারনে চুল পড়তে পারে?
  • চুল পড়ার সকল কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো এন্ড্রোজেনিক হরমোন। এটি সাধারণত পুরুষদের শরীরে তুলনামূলকভাবে অধিক পরিমাণে থাকে। কোন কারণে এই হরমোনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তখন চুল ঝরে পড়া শুরু হয়।
  • সাধারণত ছত্রাক জনিত সংক্রমণ বা খুশকি ‌ এর কারণে অধিক পরিমাণ চুল পড়ে যায়।
  • শরীরে সঠিক পুষ্টির অভাবে অনেক সময় চুল ঝরে যেতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ,‌ শর্করা,‌ খনিজ ও ভিটামিন ‌ পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে চাই।
  • টাক বা চুল ঝরে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হলো মানসিক সমস্যা বা দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তা ও মানসিক সমস্যার জন্য অনেক সময় চুল ঝরে পড়ে যায়।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি ‌ প্রয়োগ করার পর সাধারণত চুল উঠে যায়। এই পদ্ধতি প্রয়োগের প্রথম দুই তিন সপ্তাহ পরই চুল উঠে যাওয়া শুরু হয়।
  • নির্দিষ্ট কোন স্টাইল তৈরি করার জন্য চুল সেঁটে বেঁধে রাখা হলে‌ চুল পড়া শুরু হয়
  • অনেক সময় চুল রঙিন করার প্রসাধনী ব্যবহার এবং চুলে রিবন্ডিং করার ফলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে চুল অনেক সময় ঝরে পড়ে যায়। যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন, ‌ প্রেসারেও ঔষধ সেবন।
  • যে সকল চুলের গ্রোথ হয় না । সেগুলো চুল রেস্টিংফেজ বা বিশ্রামে থাকার জন্য অনেক সময় চুল ঝরে পড়ে।
  • সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি (UV) রশ্নি এর প্রভাবে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং ‌ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় চুল পড়ে যেতে পারে।
  • চুলে সঠিক ‌ তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে অনেক সময় চুল ঝরে পড়ে যেতে পারে।
  • হেয়ার ড্রায়ার এর মাধ্যমে চুলে অতিরিক্ত হিট দেওয়া বা কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়ে যেতে পারে।
  • অনেক সময় ভেজা অবস্থায় টাইট করে চুল বেঁধে রাখার ফলে চুলের ক্ষতিসাধন হয় এবং চুল পড়ে যেতে পারে।

চুল পড়া কমানোর সঠিক উপায়

সঠিকভাবে চুলের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে চুল পড়া কমানো সম্ভব। চলুন জেনে নি চুল পড়া কমানোর সঠিক ও সহজ উপায় সমূহ।
  • সঠিক খাবার গ্রহণ: পর্যাপ্ত পরিমানে পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। খাবারে ভিটামিন বি এবং জিংক পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে চুল পড়া কমে যায় ‌
  • সাধারণ তাপমাত্রার পানি ব্যবহার: মাথায় গরম পানি ব্যবহার না করলে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়। তাছাড়া শীতকালে প্রতিনিয়ত শ্যাম্পু করে গোসল না করে সপ্তাতে ২ দিন শ্যাম্পু ব্যবহার ‌ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
  • কেমিক্যাল এর ব্যবহার বন্ধ: চুলে অত্যধিক পরিমাণে কেমিক্যাল ব্যবহার করার ফলে চুল পড়ে যেতে পারে। এজন্য চুলে কেমিক্যাল ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। তুলে অত্যধিক পরিমাণে রং করার প্রসাধনী এবং রিবন্ডিং করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • তেল প্রয়োগ: মাথায় সঠিক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিনিয়ত নারকেল তেল, বাদাম তেল এবং অলিভ অয়েল তেলের সংমিশ্রণ করে দেওয়া উচিত এবং একদিন পর শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেললে চুল পড়া কমে যাবে।
  • সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার: মানসম্মত ‌ শ্যাম্পু ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়া অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়। এবং ত্বক শুষ্ক হলে অধিক পরিমাণে শ্যাম্পু না করে সপ্তাহের দু-তিনবার শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট। তাছাড়া নিম্নমানের কন্ডিশনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • কন্ডিশনার ব্যবহার: মানসম্মত এবং উন্নত কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। উন্নত মানের কন্ডিশনারে অ্যামিনো এসিড থাকে যা চুলের ক্ষয় পূরণ করে এবং চুলকে করে তোলে মসৃণ ও চুলের ‌ঝরে পড়া রোধ করে।
  • নিয়মিত চুল সাইজ করা: চুল অতিরিক্ত পরিমাণে বড় হয়ে গেলে চুল ছেঁটে বা কেটে সুন্দর অবস্থায় রাখতে হবে। অত্যধিক পরিমাণে বড় চুল রাখলে চুল গুলো দেখতে রুক্ষ লাগে এবং চুলের আগাও ফাটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এজন্য নিয়মিত চুল ছাটলে, চুল পড়া অনেকাংশে কমে যাবে।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া কমানোর উপায়

অনেকেই চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। এই সমস্যা সমাধানের ঘরোয়া উপায় গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
  • চার চামচ দই এর সাথে ‌ দুই চামচ মধু এবং দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে ‌। এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে অল্প সময়ের মধ্যে চুল পড়া কমে যাবে।
  • নারিকেল ‌ এর গুঁড়ো এবং দুধের সংমিশ্রণ করে চুলে লাগিয়ে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাতে কয়েকবার এভাবে প্রয়োগ করার ফলে চুল পড়া আগে তুলনায় অনেক অংশে কমে যাবে। কারণ দুধে থাকে ভিটামিন ই যা চুলের জন্য ‌ অত্যন্ত উপকারী।
  • চুল পড়া রোধে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান হল পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজের রসে বিদ্যমান থাকা সালফার হেয়ার ফলিকেলসে ‌পদার্থের কারণে ‌ পেঁয়াজের রস রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং চুল পড়া অতি সহজেই কমিয়ে দেয়। তাছাড়া পিয়াজে বিদ্যমান থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এর কারনে এটি চুলের থাকা রোগ জীবাণুদেরকে মেরে ফেলে এবং চুলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাকে দূর করে দেয়। পেঁয়াজের রস নিয়ে মাথায় আলতো ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে আধা ঘন্টার মত। তারপর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। প্রতি সপ্তাহ তে দু একদিন করে নিয়মিত মাখলে চুল পড়া কমে যাবে।
  • বিটরুটে বিদ্যমান থাকা পটাশিয়াম প্রোটিন ভিটামিন বি এবং সি চুল পড়া কমাতে ‌ সহায়তা করে থাকে ‌‌। বিটরুটের পাতা সেদ্ধ করে মেথির সঙ্গে মিশিয়ে চুলে নিয়মিতভাবে লাগালে চুল পড়া কমে যাবে।
  • চুল পড়া কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মেথি। মিথ্যে বিদ্যমান থাকা উপাদানের কারণে মেথি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মেথির বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে সেগুলো বেটে নিয়ে পেস্ট বানিয়ে তা আধা ঘন্টার জন্য মাথায় দিয়ে ‌ রাখতে হবে। পরবর্তীতে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত এই পেজ ব্যবহার করার ফলে চুল পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুলের বৃদ্ধি হবে।
  • চুলকে রোগ জীবাণোর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিম পাতা ব্যবহার করা যায়। নিমপাতা তে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা চুলের গোড়াকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এজন্য চুল পড়া সমস্যা দেখা দিলে গোসলের সময় হালকা গরম পানিতে নিমপাতা দিয়ে ‌ গোসল করে নিতে হবে।
  • মাথায় অনেক সময় অতিরিক্ত খুশকি থাকার ফলে চুল পড়ে যেতে পারে। এজন্য সঠিক পরিমাণে পর্যাপ্ত তেল ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুলের রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাবে। তাই চুলে তেল ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়া কমানো সম্ভব।
  • এলোভেরা ও আমলকির পেস্ট করে ‌ লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে চুলে করলে চুলের সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে। চুল পড়া বন্ধ হবে এবং খুব শীঘ্রই নতুন চুল গজাবে ।
  • ডাব ও এলাচ ‌ খাদ্য তালিকায় রাখলে। এটি চুলের আদ্রতা বজায় রাখবে এবং চুলকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর করে তুলবে ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
  • আলুর রস ডিমের কুসুম এবং মধুর মিশ্রণ‌ করে হেয়ার প্যাক তৈরি করে চুলে প্রয়োগের মাধ্যমে চুল পড়া রোধ করা সম্ভব।
  • সিল্কের বালিশের কভারে ‌ ঘুমাতে হবে এবং অতিরিক্ত চুলের স্টাইল করা বাদ দিতে হবে ফলে চুল ভেঙ্গে পড়া থেকে রক্ষা পাবে এবং ‌ চুল পড়া রোধ হবে।

চুলে খুশকি হওয়ার কারণ

মাথার ত্বকে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণ হওয়ার কারণে সাধারণত খুশকি হয়ে থাকে। চলুন জেনে খুশকি হওয়ার কারণ কি কি?
  • শীতকালে আবহাওয়ায় আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এমতাবস্তায় বাইরের ঠান্ডা আবহাওয়া এবং ঘরের ভেতরে এসির গরম বাতাসের ফলে চুলে তাপমাত্রার একটি বিরূপ প্রভাব পরে, যার ফলে খুশকি হতে পারে।
  • সঠিকভাবে এবং যথেষ্ট পরিমাণে চুল আঁচড়ানো না হলে চুলে ‌ খুশকি সৃষ্টি হতে পারে।
  • মাথায় অত্যধিক পরিমাণে তেল ব্যবহার করার মাধ্যমে খুশকির সংক্রমণ সৃষ্টি হয়। সাধারণত মাথার কোন নির্দিষ্ট চুলের গোড়ায় তেল স্তূপ আকারে জমে থাকার ফলে সেখানে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটতে পারে এবং খুশকি বৃদ্ধি হতে পারে।
  • সূর্যের অতি বেগুনের রশ্নি ‌ মাথার ত্বকে পড়ার ফলে এবং ‌ শ্বেত পদর জাতীয় অসুখ অর্থাৎ ইস্ট নামক অসুখ বা এনার্জি সমস্যার কারণে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ‌।
  • মানসম্মত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু ব্যবহার না করার ফলে অনেক সময় মাথার ত্বক  অপরিষ্কার অবস্থায় থাকে। এর ফলে‌‌ মাথায় খুশকি তৈরি হতে পারে।
  • খাবারে সঠিক পরিমাণের পুষ্টি গুনাগুন ‌ বিদ্যমান না থাকার কারণে খুশকি বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত ভিটামিন বি এবং জিংক খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে খুশকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে খুশকি হতে পারে।
  • চুলে মেলসেজিয়া নামক ফাঙ্গাস বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ বেড়ে যায়। এবং সেই সকল কোড যদি মৃত অবস্থায় থাকে তাহলে চুলে তেলের সাথে মিশ্রণ হয়ে খুশকির প্রভাব বৃদ্ধি করে।
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকার কারণেও খুশকি সৃষ্টি হতে পারে
  • সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাদের চুলে অধিক পরিমাণে খুশকি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • অনেক সময় চুল ভেজা অবস্থায় রেখে দেওয়ার ফলে চুলে খুশকির সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে খুশকি কমানোর উপায়

ইতোপূর্বে আমরা চুল পড়া এবং চুলে খুশকি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জেনেছি, এখন আমরা খুশকি কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। খুশকির এই সমস্যা সাধারণত শীতে বেশি দেখা দেয়। চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ,যেমন: চুল ঝরে পড়া, চুল রুক্ষ হওয়া এবং স্ক্যাল্প ইনফেকশন সাধারণত খুশকির কারণে হয়ে থাকে। খুশকি দূর করার জন্য সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যে সকল শ্যাম্পু খুশকি দূর করতে সহায়তা করে সে সকল,‌ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। চুল আঁচরাতে ব্রাশের বিকল্প হিসেবে চিরনি এর ব্যবহার করা লাগবে। 
মাথাতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে এবং চুলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করে মাথাকে ধুলোবালির হাত থেকে রক্ষা করা যায় তাছাড়া খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখলে মাথার খুশকি সমস্যা প্রতিরোধ হয়। চর্বি যুক্ত খাবার খুশকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। অধিক পরিমাণে পানি পান করতে এবং বিভিন্ন ফলমূল বিশেষ করে টক জাতীয় ফল খেতে হবে এবং শাকসবজি খেতে হবে।যে ‌সকল উপাদান ব্যবহার করে খুশকি কমানো যায় সেসব সম্বন্ধে নিচে বর্ণনা করা হলো।
  • নারিকেল তেল ব্যবহার: খুশকি কমানোর একটি সহজ উপায় হলো নারিকেলের তেল ব্যবহার করা। নিয়মিত নারিকেলের তেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়ার ময়েশ্চারাইজ বৃদ্ধি পায় এবং এবং বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
  • পেঁয়াজের রস ব্যবহার: পেঁয়াজের রস মাথার জন্য খুবই উপকারী। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পিয়াজের রস মাথায় লাগিয়ে মালিশ করলে খুশকি সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
  • টক দই এর ব্যবহার: মাথার খুশকি দূর করার আরো একটি উপাদান হলো টক দই। টক দই মাথায় দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট মাথায় দিয়ে রেখে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে ভালোভাবে। নিয়মিত এই পদ্ধতির প্রয়োগে খুশকি অনেকাংশে কমে যাবে।
  • লেবুর রসের ব্যবহার: একটি লেবুর রস এবং সামান্য পানি মিশিয়ে মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে‌। দিয়ে ভালোভাবে মাথা ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই তিনবার নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে চুলের খুশকি কমে যাবে।
  • মেথি ব্যবহার: চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারে একটি উপাদান হল মেথি। সারারাত জলে মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে তা ধুয়ে ভালোভাবে বেটে নিতে হয় ‌। এই বেটে নেওয়া মেথি গুলো চুলের গোড়ায় দিয়ে রাখতে হবে। কয়েক ঘন্টা পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে ‌। চুল ধুয়ে ফেলার পর যেই পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখা হয়েছিল সেই পানি দিয়ে মাথাটা ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাতে দু-তিনবার এভাবে নিয়মিত মেথি ব্যবহার করার মাধ্যমে চুলের খুশকি কমে যাবে।
  • গ্রিন টি ব্যাগ ব্যবহার: গ্রিনটিতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায়, এটি মাথার ত্বকের যত্ন নিতে সাহায্য করে। একটি গ্রিন টি ব্যাগ গরম পানিতে ১৫ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রেখে ‌ পরবর্তীতে যা ঠান্ডা হলে মাথায় ‌ দিয়ে আধা ঘন্টার মত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে হবে। এটি খুশকি কমাতে সহায়তা করবে।
  • মুলতানি মাটি ব্যবহার: মুলতানি মাটি খুবই উপকারী একটি উপাদান। মুলতানি মাটির সাথে সামান্য পরিমাণে লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্ট মাথাতে দিয়ে ২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মুলতানি মাটি ব্যবহারের ফলে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুলের গোড়াও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
  • এলোভেরার জেল ব্যবহার: চুলের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান হচ্ছে অ্যালোভেরার জেল। শ্যাম্পু করার কিছুক্ষণ আগে মাথায় এলোভেরার জেল দিয়ে মাসাজ করলে খুশকির অনেকাংশে কমে আসে। এজন্য শ্যাম্পু করার আগে মাথায় এলোভেরার জেল লাগিয়ে নিয়ে তারপর শ্যাম্পু করা উচিত। এতে চুল হবে সিল্কি, খুশকি হবে দূর।
  • তুলসী ও আমলকির পেস্ট: কয়েকটি তুলসী পাতা এবং আমলকি পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেজ তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্ট মাথায় নিয়মিত লাগিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি খুশকি কমাতে সাহায্য করবে।
  • নিম পাতা ব্যবহার: ১৫ বৃষ্টির নিমপাতা নিয়ে ফুটন্ত জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরবর্তীতে এই নিমপাতা দিয়ে পেস্ট তৈরি করে তাতে সামান্য দই মিশিয়ে এই পেস্ট মাথায় দিয়ে রাখতে হবে আধা ঘন্টার জন্য। আধাঘন্টা হয়ে গেলে পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে হবে । এর ফলে মাথাতে খুশকি সৃষ্টিকারী সকল রোগ জীবাণু দূর হয়ে যাবে এবং মাথা পরিষ্কার থাকবে ফলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

চুল ঘন করার উপায়

উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা চুল পড়া ও খুশকি কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো চুল ঘন করার উপায়। পুরুষ বা নারী উভয়ের জন্যই চুল শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করে দেয় চুল। সবার চুল একরকম হয় না। কারো চুল পাতলা হয় এবং কারো চুল হয় ঘন। সবাই চাই নিজের চুলকে ঘন করে তুলতে। চুলকে ঘন করার জন্য যে সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত সেগুলো নিজের বর্ণনা করা হলো।
  • সপ্তাতে অন্তত দুইদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। শ্যাম্পু ব্যবহার করার পূর্বে মাথায় গরম তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, নারিকেল তেল এবং আমন্ড অয়েল এই সকল তেল চুলের ‌ গোরাতে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে এবং চুলের রুক্ষতা কমিয়ে দেয়। ফলে চুল ঘন হয়।
  • যে সকল উপাদান চুলে ভিটামিন ও মিনারেল জোগাতে সাহায্য করে সে সকল উপাদান চুলে ব্যবহার করার প্রয়োজন। যেমন: পেঁয়াজের রস, এলোভেরা জেল, নারিকেল তেল, কাস্টর অয়েল ইত্যাদি। এ সকল তেল নিয়মিত ব্যবহার করার মাধ্যমে চুলকে ঘন করে তোলা যায়।
  • সঠিক খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমেও চুলের যত্ন নেওয়া যায়। ডিম, দুধ, দই, মাছ ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যেমন: ব্রুকলি, পালং, বাধাকপি এই সকল কিছু চুলকে ঘন করে তুলতে সাহায্য করে।
  • ভালো ও উন্নত মানের শ্যাম্পু তেল ও কন্ডিশনার চুলকে ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং চুলের সকল সমস্যা যেমন খুশকি চুল পড়া এ সকল দূর করে চুলকে ঘন হতে সাহায্য করে।
  • ডিম ও টক দই এর সংমিশ্রণে পেস্ট তৈরি করে তা মাথায় ব্যবহার করার মাধ্যমে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে ফলে চুল ঘন হবে।
  • অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। চুলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা লাগবে। চুলকে বেশি বড় অবস্থায় না রেখে চারিদিকে সুন্দরভাবে সাইজ করে ছেটে রাখতে হবে। চুলে এলোভেরা ব্যবহার করতে হবে। এবং ভেজা অবস্থায় চুল রাখা যাবে না। এই সকল নিয়মকানুন মেনে চলে যত্ন নিলে চুল পড়া রোধ হবে এবং চুল ঘন হয়ে উঠবে।

লেখক এর মন্তব্য

আজকে আমরা একটি দৈনন্দিন সমস্যা চুল পড়া ও খুশকির কারণ সম্পর্কে জেনেছি এবং চুল পড়া ও খুশকি কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। চুল আমাদের শরীরের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করে দেয়। এজন্য আমাদেরকে চুলের সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। এবং যে সকল কারণে চুল পড়ে এবং মাথায় খুশকি হয় সে সকল বিষয়ে মাথায় রেখে সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উচিত। সকল দিকে খেয়াল রেখে চলে যত্ন নিলে চুল পড়া রোধ হবে খুশকি কমবে এবং চুল হয়ে উঠবে ঘন। চুল ও মাথার ত্বক সম্পর্কিত বিস্তারিত যেকোনো তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনে প্রশ্ন করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url