অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ - অ্যালার্জি হওয়ার কারণ
আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ।অ্যালার্জি বলতে বুঝায় সাধারণত শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি। অ্যালার্জি হওয়ার কারণ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ত্রুটি।স্বাভাবিকভাবে যে সকল বস্তু থেকে সাধারণ মানুষদের কোন ক্ষতিকর প্রভাব বা সমস্যা হয় না সে সকল বস্তু অন্য কিছু মানুষ যাদের অ্যালার্জি এর সমস্যা আছে তাদের জন্য একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই সমস্যা থেকে রেহায় আর উপায় হলো যে সকল বস্তুতে অ্যালার্জি হয়, সে সকল বস্তুকে এড়িয়ে চলা এবং অতিরিক্ত সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
অ্যালার্জি একটি বিরক্তিকর সমস্যা।ত্বকে অ্যালার্জি হলে সাধারণত ত্বক ফুলে যায় বা চুলকায়। অনেক সময় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাত-পা ঝিনঝিন করে। দম বন্ধ হয়ে আসে।
অ্যালার্জি বলতে কি বুঝায়?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অনেকের ধুলোবালি যুক্ত রাস্তায় হেঁটে গেলেও তেমন কোন সমস্যা হয় না । কিন্তু যাদের অ্যালার্জি আছে ধুলোবালিতে, তারা যদি ধুলোবালি যুক্ত রাস্তায় হাটে তাহলে তাদের হাঁচি, সর্দি, কাশি, চোখ লাল হয়ে পড়া ও চুলকানি হওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে অ্যালার্জিজনিত কারণে। যে সকল বস্তু সাধারণত শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু সে সকল বস্তু থেকে শরীরের প্রতি যে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকেই এলার্জি বলা হয়।
অ্যালার্জি হওয়ার প্রধান কারণ সমূহ
প্রতিটি মানুষের শরীরে এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে। যাকে ইমিউন সিস্টেম বলা হয়। কোন কারণে এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই সমস্যা দেখা দিলে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু বস্তু সংস্পর্শে এলে শরীরে অ্যালার্জি দেখা দেয়। অ্যালার্জি হওয়ার কারণগুলো নিচে দেওয়া হল ।
- ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন খাবার
- রাস্তাঘাটের ময়লা ও ধুলাবালি
- অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা গরম পরিবেশ
- অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া
- ঘেমে যাওয়া
- বিভিন্ন ধরনের গৃহপালিত পশু পাখি
- ফুলের পরাগ রেনু
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি
- ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া
- বিভিন্ন ধরনের ঔষধ
- বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ
- মানসিক চাপ
অ্যালার্জি এর প্রধান সমস্যাগুলো কি?
অ্যালার্জি জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যেহেতু একেকজনের একেক ধরনের বস্তুর প্রতি
অ্যালার্জি থাকে, সেহেতু একেকজনের অ্যালার্জির সমস্যাও ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আপনি জেনে নিয়ে এনার্জি এর প্রধান সমস্যা গুলো সম্পর্কে।
- সর্দি
- কাশি
- অ্যাজমা বা হাঁপানি
- খাবারের এলার্জি
- একজিমা
- চামড়ার চুলকানি বা ফুসকুড়ি হওয়া
- চামড়া ঝরে যাওয়া
- শরীরের বিভিন্ন অংশ হালকা ফুলে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- বুক ব্যথা করা
- চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
শীতকালে অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ
ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি অ্যালার্জি হওয়ার কারণ। অ্যালার্জি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমাদেরকে অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে হবে।
- শীতকালে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এবং অ্যালার্জির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বাইরে বের হওয়ার পূর্বে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
- শীতের সকালে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করলে নাক মুখ ঢেকে বের হতে হবে।
- শীতের মধ্যে খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। কারণ খালি পায়ে হাঁটলেই মুহূর্তের মধ্যে ঠান্ডা লেগে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এবং এর ফলে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা হতে পারে।
- অ্যালার্জি এর কারণে যদি শরীরে কোন প্রকার র্যাশ বের হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- শীতকালে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। যাতে বাইরের বাতাসের ফলে শরীরে ঠান্ডা না লেগে যায়।
- পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। কমলা লেবু, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, মাল্টা, জাম্বুরা সহ বিভিন্ন ধরনের সবুজ ও সতেজ শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে।
- অতিরিক্ত হাঁচি, সর্দি বা কাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ও বিভিন্ন ধরনের নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
- মধু, কালোজিরা ঠান্ডার মহা ঔষধ। এ সকল কিছু সেবন করলে ঠান্ডা জনিত অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের রাখা সম্ভব হয় ।
অ্যালার্জি দূর করার ৩ টি ঘরোয়া উপায়
ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি শীতকালে অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ। এখন আমরা অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে জানবো।
- এক গ্লাস সমপরিমাণ জলে দুই চামচ পরিমান সিডার ভিনেগার এর সাথে অল্প পরিমাণে মধু মিশ্রণ করে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে পারেন অ্যালার্জি দূর করার জন্য।
- আদা চা বানিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে পান করার মাধ্যমে অ্যালার্জি দূর হতে পারে। অথবা বিভিন্ন ধরনের ভেষজ, আয়ুর্বেদিক বা হারবাল চা পান করলে শরীরের ঠান্ডা দ্রুত হ্রাস পাবে।
- হালকা গরম পানিতে দুই চামচ মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিনিয়ত খেলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা কমে যায়।
ত্বকের অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ
- ত্বকের অ্যালার্জি দূর করার জন্য টি- ট্রী ওয়েল খুবই উপকারী। এই তেলে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দূর করে।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এ রয়েছে এসিটিক অ্যাসিড যা ত্বকের চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।অ্যালার্জি জনিত কারণে ত্বক চুলকালে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নারিকেল তেল ত্বকের জন্য অত্যান্ত উপকারী। ত্বকের মশ্চারাইজিং বৃদ্ধি করা এবং অ্যালার্জি জনিত চুলকানি রক্ষার ক্ষেত্রে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তির একটি ভালো উপায় হল ত্বকে অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করা। এই জেল ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি অনেকাংশে কমে যায়।
- নিম পাতা ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া জনিত অ্যালার্জির সমস্যা থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়। ত্বকের যে স্থানে অ্যালার্জিজনিত চুলকানি হয় সেখানে নিম পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
- আদা, মৌরি এবং পুদিনা পাতা হালকা কুসুম গরম জলে ফুটিয়ে দিলে তিন-চারবার পান করলে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এর ফলে অ্যালার্জির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- আমলকি পাউডার ও মধু মিশ্রণ করে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে শরীর এলার্জি মুক্ত থাকবে
চোখের অ্যালার্জি দূর করার সহজ উপায় সমূহ
- গোলাপ জল ব্যবহার: চোখের অ্যালার্জি এর জন্য গোলাপজল খুবই উপকারী। চোখে দুই তিন ফোঁটা গোলাপজল দিলে চোখের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়। চোখে গোলাপ জল দেওয়ার পর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলে এটি বেশি কার্যকরী হয়।
- লবণ যুক্ত পানি: এক গ্লাস পানিতে ৩ ৪ চামচ লবণ গুলিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটানোর পর পানি ঠান্ডা করার জন্য রেখে দিতে হবে। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিষ্কার তোলার টুকরো নিয়ে সেই পানিতে ভিজিয়ে চোখে ধীরে ধীরে মুছতে হবে। ফলশ্রুতিতে চোখের ভেতরে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে এবং চোখের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমে যাবে।
- ঠান্ডা পানি ব্যবহার: অ্যালার্জি এর ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চোখ ফুলে গেলে বা লাল হয়ে গেলে, চোখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ঝাপটা দিলে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।
- সানগ্লাস ব্যবহার: চোখে যদি অতিরিক্ত অ্যালার্জি জনিত সমস্যা থাকে। তাহলে চোখে ধুলোবালি পড়লে সেই সমস্যারও বৃদ্ধি হতে পারে। এক্ষেত্রে চোখের সুরক্ষার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ঘরবাড়ি এবং বিছানা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে ঘরবাড়িতে বেশি ধুলোবালি থাকবে না ফলে চোখের খুব একটা সমস্যা হবে না। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা যাবে না। এবং চোখ চুলকালে আঙ্গুল দিয়ে চোখ কে ডলা যাবে না।
লেখক এর মন্তব্য
সাধারণত বিভিন্ন কারণে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এই অ্যালার্জি হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য আমাদের যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদেরকে সব সময় সচেতন থাকা জরুরী।অ্যালার্জি জনিত বস্তু বা খাদ্য সব সময় এড়িয়ে চলা উচিত। এবং অতিরিক্ত সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।অ্যালার্জি সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনের মতামত দিন।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url