পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সমূহ - পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ সমূহ
পাকস্থলীতে প্রয়োজনের অধিক এসিড নিঃসরণ হলে গ্যাস বা এসিডিটি সৃষ্টি হয়। বেশি সময় ধরে খালি পেটে থাকলে এবং প্রয়োজনের বেশি চা কফি বা কোন মাদকদ্রব্য সেবন করলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা অনিদ্রা ও ধূমপান ইত্যাদি কারণে গ্যাস হয়। পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত হাটাও ব্যায়াম করা , সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে গ্যাসের সমস্যা দূর করা সম্ভব।পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সমূহ এবং পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ সমূহ সম্পর্কে জানার জন্য সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
বর্তমানে গ্যাস সবার একটি নিত্যদিনের সমস্যা। কিন্তু এই গ্যাসকে অবহেলা করলে চলবে না। গ্যাসের সমস্যাকে অবহেলা করলে পরবর্তীতে তা বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গ্যাসের কারণে পেটে জ্বালাপোড়া হয়, হেঁচকি ওঠে, পেট ফুলে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ সমূহ
বর্তমান সময়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ব্যাপক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে সকল খাদ্য আমরা গ্রহণ করি তার সবটুকু পরিপূর্ণরূপে হজম হয় না। যখন এই হজম না হওয়া খাদ্য বৃহদন্ত্রে পৌঁছে যায় তখন বিপাক ক্রিয়া চলমান থাকে। এই বিভাগের কারণেই সৃষ্টি হয় গ্যাস। অনেকের ক্ষেত্রে দুধের তৈরি খাবার গ্যাসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এর সমস্যা আছে তাদের দুধ খেলে গ্যাস হতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন খাদ্য যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ আরো অন্যান্য ভাজাপোড়া খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাস হতে পারে। পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো।
- বেশি বাতাস শরীরে প্রবেশ করলে গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে। যখন কোন ব্যক্তি মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করে তখন অন্ত্রের কিছু গ্যাস ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু যদি সেখানে বাস করে এবং সেই গ্যাস আপনি বাতাসের সাথে শ্বাস নেন । এই বাতাস এর কিছু অংশ ঢেঁকুর আকারে বের হয় এবং বাকি অংশ বের হয় গ্যাসের মাধ্যমে।
- বিভিন্ন ধরনের খারাপ অভ্যাসের কারণে ও পেটের ভেতরে বাতাস প্রবেশ করে ফলে তা পরবর্তীতে গ্যাস আকারে বেরিয়ে আসে। অনেকে কোন ক্যান্ডি বা চুইংগাম খাওয়ার সময় অথবা স্ট্রয়ের সাথে পানি পান করার সময় অতিরিক্ত পরিমাণে বাতাস গ্রহণ করে। আবার অনেকে আছে যাদের কলম চিবানোর মত খারাপ অভ্যাস থাকে। এ সকল খারাপ অভ্যাসের জন্য পেটে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে বাতাস ঢুকে সেগুলো পরবর্তীতে গ্যাস রূপে বের হয়।
- কার্বনেটেড পানীয় যেমন: সোডা বা বিয়ার জাতীয় কোন পানীয় পান করলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- রাতে বা দিনে যখন আপনি ঘুমান, তখন ঘুমানোর সময় যদি মুখ দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বাতাস গ্রহণ করেন অথবা মুখ খোলা রেখে শ্বাস নেন বা নাক ডাকেন তাহলে প্রচুর পরিমাণে বাতাস পেটের মধ্যে ঢুকে যাই ফলে পরবর্তীতে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- যে সকল খাবার শরীরের জন্য উপযুক্ত নয় এবং সঠিকভাবে হজম হয় না এই ধরনের খাবার গ্রহণ করলে গ্যাস হতে পারে।
- যদি কোন ব্যক্তির কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থাকে এবং খাদ্য তার অন্তরে ধীরে ধীরে যায় তাহলে গ্যাস গঠনের বেশি সুযোগ থাকে। পেটে অতিরিক্ত সময় ধরে খাবার থাকলে জীবাণুর আক্রমণের সময়ও দীর্ঘ হয় ফলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। সাধারণত কোন ব্যক্তির বয়স বাড়ার সাথে সাথে হজম শক্তি কমতে থাকে এর ফলে গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
পেটে গ্যাসের লক্ষণ
- গ্যাস হলে সাধারণত বুকে এবং পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।
- যকৃৎ এ দীর্ঘ সময় ব্যাপী প্রদাহ থেকে গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- এসিড অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষরণ হওয়ার ফলে গলা জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা সহ বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।
- অনেক সময় হঠাৎ করে পেট ফুলে যায় গ্যাসের কারণে।
- বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে যকৃত থেকে এক ধরনের রস বের হয় যা গলব্লাডারে জমা হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে আমাদের দেহের তরল হজমে বাধা দেয় । এবং এর ফলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়
- কিছু সময় পর পর দুর্গন্ধযুক্ত ঢেঁকুর ওঠা পেটে গ্যাসের লক্ষণ।
- অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের ফলে হজম না হয়ে বমি বমি ভাব হয়। পরবর্তীতে তা থেকে গ্যাস এর সূত্রপাত হয়।
গ্যাস হলে কোন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা?
বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে হজম হতে সমস্যা হয়। এবং এই সমস্যার ফলেই পেটে গ্যাস সৃষ্টি হওয়া সম্ভব না বেড়ে যায়। গ্যাস থেকে মুক্তির জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পেটে গ্যাস হলে যে ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
- অতিরিক্ত পরিমাণে চা বা কফি খাওয়ার ফলে পেটে এসিডের উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে হলে গ্যাসের গঠন হতে শুরু করে। তাছাড়া দুধ চা খাওয়ার ফলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই দুধ চা বা কফি না খেয়ে সকালে ভেষজ চা খাওয়া উচিত।
- সকালবেলা ফুলকপি ও বাঁধাকপি এই দুই ধরনের সবজি এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এই দুটি সবজিতে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে যা হজম করা মুশকিল। এর ফলশ্রুতিতে গ্যাস সৃষ্টি হয়।
- সকাল সকাল আপেল এবং নাশপাতি গ্যাসের রোগীদের খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই দুই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ এবং ফাইবার যা পেট ফাঁপা সহ গ্যাসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- সকালে নাস্তায় শসা পাপিয়া দের সালাদ খাওয়া উচিত নয়। সকালে এই জাতীয় উচ্চ ফাইবার যুক্ত সবজি খেলে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। তাই সকালে কাঁচা শাকসবজি, শসা বা পেঁয়াজ না খেয়ে রান্নাবা সেদ্ধ করে সবজি খেতে পারেন।
- ভুট্টাতে অধিক পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে এটি হজম করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এজন্য ভুট্টা জাতীয় খাবার গ্যাসের রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত।
- অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার খেলে দেহে পানি জমার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এবং পাকস্থলী সমস্যা শুরু হয় ফলশ্রুতিতে খাবার সহজে হজম হতে পারে না। এজন্য গ্যাস রোগীদের লবণাক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।
পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সমূহ
যে সকল খাবার খেলে গ্যাসের সৃষ্টি হয় সে সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য।ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী পেটে গ্যাস কমানোর জন্য সাধারণত এন্টাসিড, ওমরাজল, প্যান্টটাপ্রাজল ইত্যাদি ঔষধ সেবন করা হয়। তাছাড়া হাতের কাছে ঔষধ উপস্থিত না থাকলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেটের গ্যাস কমানো সম্ভব।
- গ্যাসের সমস্যা সমাধানের একটি কার্যকরী উপায় হলো সকাল সকাল উঠে খালি পেটে গরম জল পান করা। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে জল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পৃথিবীর সমস্ত ময়লা এবং রোগ জীবাণুর দূর করে দেয় গরম জল।
- মিষ্টি দই এর পরিবর্তে টক দই খেতে হবে। টক দই এ রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের জন্য অত্যন্ত কল্যাণজনক। এমনকি স্বাস্থ্য রক্ষার কাজে টক দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এজন্য গ্যাসের সমস্যার সমাধানের জন্য খাবার তালিকায় টক দই রাখা উচিত।
- বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু এবং সতেজ ফল খাওয়া জরুরী। ফল খেলে ফাইবার পাওয়া যায়। এই ফাইবার আমাদের শরীরের অন্তরের জন্য খুবই উপকারী বলে গণ্য। তাছাড়া ফলের মধ্যে রয়েছে খনিজ ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। এজন্য পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এবং গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া উচিত
- পেটে গ্যাস হচ্ছে বুঝতে পারার সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি পান করতে হবে। পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী । পানির মাধ্যমে খাবার হজমে সহায়তা হয়।
- চিত হয়ে শুয়ে থেকে পেটে আস্তে আস্তে মালিশ করতে হবে যা হজমে সাহায্য করে।
- লবঙ্গ গ্যাস দূর করনে সহায়তা করে। নিয়মিতভাবে লবঙ্গ খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়।
- পেটে গ্যাস হচ্ছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে যদি একটু হাঁটাহাঁটি করা যায় অথবা সহজ কিছু ব্যায়াম করা যায় তাহলে পেটের গ্যাসের প্রতিকার হয়।
- আন্টিআক্সিডেন্ট যুক্ত ডাবের পানি পান করলে পেটের গ্যাসের প্রতিকার হয়ে থাকে। তাছাড়া ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে মিনারেলস যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
- রাতে খাবার পরে অথবা সকাল বেলা খালি পেটে মৌরি খেলে পেটের গ্যাসের প্রতিকার হয় ।
- প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভানয়েড ও আ্যন্টি ইনফ্লেমেটরি যুক্ত শসা পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে। শসা খাওয়ার ফলে পেট ঠান্ডা হয়ে থাকে।
- সকাল বেলায় খালি পেটে আস্ত জিরা চাবিয়ে খেলে অথবা জিরা ভিজিয়ে রাখা পানি পান করলে পেটের গ্যাসের প্রতিকার হয়ে থাকে। নিয়ম করে প্রতিদিন যদি জিরা খাওয়া হয় তাহলে গ্যাসের সমস্যা দূর করনের অনেক সহায়তা হয়।
লেখক এর মন্তব্য
আজকে আমরা পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ, গ্যাস হওয়ার লক্ষণ এবং পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সমূহ সম্পর্কে জেনেছি । গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেকে এই গ্যাসের সমস্যার জন্য প্রচুর অস্বস্তি বোধ করে। সঠিক খাবার গ্রহণ করলে এবং নিজের শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা সম্ভব। অতিরিক্ত পরিমাণে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পেলে দ্রুত কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সম্পর্কে যে কোন তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনে মতামত দিন।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url