তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় - শরীর ঠান্ডা রাখতে কি খাবেন?

তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় নিয়ে সবাই চিন্তিত। দিন দিন গরম বেড়ে যাচ্ছে। এই গরমের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা। বিশেষ করে হিট স্ট্রোকের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এই গরমের ফলে বেড়ে যাচ্ছে পানি শূন্যতা ডায়রিয়ার সহ আরো অনেক ধরনের রোগ। আমাদেরকে এই গরম থেকে বাঁচার জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করা উচিত। এবং যে সকল খাবার খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, সকল খাবার খাওয়া উচিত। আসুন আমরা তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় - শরীর ঠান্ডা রাখতে কি খাবেন?
আপনি কি জানেন, শরীর ঠান্ডা রাখতে কি খাবেন? পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং সতেজ ফলের জুস খাওয়া উচিত। তাছাড়া চাল কুমড়া লাউ ঝিঙে চিচিঙ্গা এই সকল খাদ্য তে শরীরে কম গরম অনুভব হয়।

অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাড়ার কারণ সমূহ 

গ্রীষ্মকালে সাধারণত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গরম অনুভূত হয়। কিন্তু বর্তমানে তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণত ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা কে তীব্র তাপ প্রবাহ বলে গণ্য করা হয়। সবাই তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় নিয়ে চিন্তিত। বর্তমানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে এবং কালবৈশাখীর ঝড় না হওয়ার জন্য গরমের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকার জন্য মানুষের শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে ঘেমে যাচ্ছে। সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন।

মানুষ প্রতিনিয়ত গাছপালা কেটে ফেলছে। এসব কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অতিরিক্ত হারে বেড়েই চলছে। গাছপালা কেটে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং পানির জলাশয় গুলো ভরাট করে দেওয়ার কারণেই দিন দিন। তাছাড়া শিল্পায়ন,‌ ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া‌ এই সকল কিছু তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে।

তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় 

কিছুদিন ধরে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই তীব্র গরমের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উচিত। তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে নিচের কাজগুলো করা যেতে পারে।
  • পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরিধান করা উচিত।
  • বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়ার সময়‌ রোদ যুক্ত স্থান এড়িয়ে চলা উচিত।
  • শরীরে পানি শূন্যতা সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং শরবত পান করা উচিত।
  • দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে একটি স্যালাইন খেয়ে নেওয়া উচিত। শরীরকে সতেজ রাখতে স্যালাইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন রকমের তাজা ও সতেজ ফলমূলের রস পান করা উচিত।
  • বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ছাতা এবং টুপি নিয়ে বের হওয়া উচিত।
  • সূর্যের অতিবেগুনি ক্ষতিকর প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। গরমের সময় যথাসম্ভব কম বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত এবং বাইরে গেলে ছায়াযুক্ত স্থানে চলাফেরা করা উচিত।
  • অতিরিক্ত গরম লাগলে এবং ঘেমে গেলে মুখে ঠান্ডা পানি ঝাপটা দেওয়া উচিত। এতে অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যায়।
  • তীব্র গরমে আউটডোর ব্যায়াম দিনের বেলার পরিবর্তে সন্ধ্যা বাড়াতে করা উচিত।
  • তীব্র গরমে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করা উচিত।
  • ডাবের পানি, পাকা কলা, তরমুজ ও শসা সহ বিভিন্ন ধরনের টাটকা ফল খাওয়া উচিত।
  • রোদে বাইরে না বের হয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করা উচিত।
  • সূর্যের আলো থেকে চোখের রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত।
  • গরমের ফলে কোন শারীরিক রোগ বা সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

শরীর ঠান্ডা রাখতে কি খাবেন? 

এই তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় হিসেবে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। যে সকল খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সে সকল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। কিছু কিছু খাদ্য খাওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ সকল খাবার পরিহার করতে হবে। যে সকল খাবার খেলে শরীর ও পেট ঠান্ডা থাকে সে সকল খাবার গ্রহণ করা উচিত। আসুন জেনে নেই তীব্র গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কোন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
  • স্টার্চ ও জটিল শর্করা: গরমের সুস্থ থাকার উপায় হল তরল বা পানীয় জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা লাগবে। যে সকল খাদ্য শরীরে পানির মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে সে সকল খাদ্য নিয়মিতভাবে খেতে হবে। ওটস, লাল চিড়া এই জাতীয় খাবার শর্করা ও স্টার্চ বিদ্যমান। এ সকল খাবার শরীরকে অনেক সময়ের জন্য ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া চিয়া সিড, তোকমা, ইসবগুল এই জাতীয় খাবার ওজনের থেকে সাধারণত তিনগুণ বেশি পরিমাণে পানি শোষণ করে থাকে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ফলে শরীর গরমের হাত থেকে রক্ষা পায়।
  • পানিযুক্ত ফল ও সবজি: শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন করা উচিত। যে সকল খাবারে পানি বেশি থাকে না সে সকল খাবার বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে পানিযুক্ত ফল ও সবজি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন: কমলা, পেঁপে, আখের রস, ডালিম, আপেল, তরমুজ, মাল্টা, নাশপাতি, স্ট্রবেরি এই সকল ফলের রস বা জুস তৈরি করে খেলে গরমে অনেক উপকার দিবে। এসব খাওয়ার মাধ্যমে পে ট ও শরীর ঠান্ডা থাকবে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সবুজ পানিযুক্ত শাকসবজি যেগুলো পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে সে সকল সবজি গ্রহণ করতে হবে। লাউ, শসা, পেঁপে, টমেটো, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, পালং শাক ও লেটুস পাতা এই সকল সবজি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। তাছাড়াও ব্রকলি বা বাঁধাকপি বিশেষভাবে খাদ্য তালিকায় একান্ত রাখা প্রয়োজন। কারণ এই দুটি সবজিতে প্রায় ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ পানি বিদ্যমান থাকে।
  • অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল খাদ্য : গরমে বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় রসুন, মধু, পুদিনা পাতা ও আদা রাখতে হবে। গরমে সুস্থ থাকার জন্য বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং মশলাদার ও ভাজাপোড়া জাতীয় খাদ্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। এভাবে সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে গরমের সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে এবং অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
  • ডাবের পানি: শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে ডাবের পানি। ডাবের পানি ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। এজন্য ডাবের পানি বা স্যালাইন খেলে গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এবং শরীরও পেট ঠান্ডা থাকবে।
  • কাঁচা আমের শরবত: কাঁচা আম ভিটামিন সি যুক্ত থাকায় এটি শরবত হিসেবে খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এবং পেট ঠান্ডা হয়।
  • আখের রস ও বেলের শরবত: গরমের সময় আখের রস ও বেলে সর্ব শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আপনি আখের রসের সাথে লেবুর রস, পুদিনা পাতা মিশিয়ে খেলে আরও বেশি কার্যকরী হবে।

লেখক এর মন্তব্য 

গরমের সময় তাপমাত্রা বেশি থাকা স্বাভাবিক হলেও বর্তমানে যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা একদম অসহনীয়। এভাবে গরম বাড়তে থাকলে এবং শরীরের প্রতি সচেতন না থাকলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি ও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য আমাদেরকে তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেই তথ্য কে কাজে লাগানো উচিত। গরমের সময় নিয়ম মেনে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর ও পেট ঠান্ডা থাকে। এজন্য আমাদের উচিত সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা। সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে অবস্থান করবে। 

আশা করি, আমার পোস্টটি পড়ে আপনারা সকলে উপকৃত হয়েছেন। গরম সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনে আপনার মতামত দিন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পোস্ট করার জন্য সকল পাঠকদের কে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url