অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ ও সমাধান

অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো।সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর হরমোনের প্রভাবে নারীদের জরায়ুতে কিছু পরিবর্তনের কারণে জরায়ু থেকে রক্ত নিঃসৃত হয়ে যৌনি পথ দিয়ে বের হয়ে আসে, একেই সাধারণত ঋতু চক্র বলা হয়ে থাকে। পলি সিস্টিক ‌ ওভারি সিনড্রোম এর কারণে সাধারণত অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর জীবন, হালকা শরীর চর্চা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। 
অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে জানুন
সাধারণত মেয়েদের সময় মত ও নিয়মমতো পিরিয়ড স্বাভাবিকভাবেই হয়। কিন্তু যদি কখনো এই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় বা অনিয়মিত হয় তাহলে তা ভালো বিষয় নয়। এজন্য অনিয়মিত পিরিয়ড হলে অবহেলা না করে সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

অনিয়মিত পিরিয়ড কাকে বলা হয়?

সাধারণত স্বাভাবিকভাবেই ২৮ দিন পর পর মেয়েদের মাসিক হয়ে থাকে। মেয়েদের মাসিক হওয়ার ক্ষেত্রে ২১ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত দেরি হওয়া স্বাভাবিক বলে গণ্য করা হয়। মাসিক সাধারণত পাঁচ ছয় দিন ব্যাপী হয়ে থাকে। এক মাসিকে সাধারণত ৮০ মিলি পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ সকল বিষয় গুলো যদি স্বাভাবিকভাবে না হয় তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। অর্থাৎ যদি ৩৫ দিনেরও উর্ধ্ব সময় পর্যন্ত মাসিক না হয় তবে সেটি অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হবে। 

মাসিক চলাকালীন সময় মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব সহ আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে মাসিক দুই বা কখনো কখনো চার মাস পর্যন্ত না হয়ে থাকে। এই অবস্থাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়। এই অনিয়মিত পিরিয়ড কে অবহেলা করলে চলবে না। কারণ এই অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের বড় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অনিয়মিত পিরিয়ড হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ সমূহ 

  • অনিয়মিত ভিডিওড হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো POS(polycystic ovary syndrome) । তাছাড়া আরও অন্য কারণ আছে যে সকল কারণে মেয়েদের ঠিকমতো পিরিয়ড হয় না। যেমন: ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্যগ্রহণ অর্থাৎ অতিরিক্ত কফি পান করা, অত্যধিক পরিমাণে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করা, ধুমপান ও মাদকদ্রব্য সেবন করা।
  • অনেক সময় হরমোন জনিত কারণে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।
  • সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রথম দুই এক বছর মেয়েদের ডিম্বাশয়ের অপরিপক্কতার জন্য অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকতে পারে।
  • মেনোপজ হওয়ার আগের কয়েক বছরের হরমোনের তারতম্যের সমস্যার কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে।
  • কখনো কখনো কোনো ওষুধ খাওয়ার খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার জন্য অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে।
  • হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন বেড়ে গেলে বা কমে গেলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।
  • বিয়ের পর স্ত্রীদের বিভিন্ন ধরনের রোগ, জরায়ুর প্রদাহ, ভাইব্রয়েড টিউমার বা জরায়ুর অন্যান্য সমস্যার কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যেমন: পিল, ইনজেকশন ব্যবহারের ফলে দেরিতে বা অনিয়মিত সময়ে পিরিয়ড হয়।
  • অনেক সময় থাইরয়েডের সমস্যার কারণেও দেরিতে পিরিয়ড হতে পারে।

অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার সমস্যার সমাধান 

স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের নিয়মিত বা সময় মত পিরিয়ড হয়ে থাকে। যদি কোন কারনে নিয়মিত পিরিয়ড না হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে তার কোন শারীরিক সমস্যা আছে। বিভিন্ন কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে। এই অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যার সমাধানও আছে। অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যার সমাধান গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
  • ব্যায়াম: যে সকল মহিলারা নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করে তাদের অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। এমন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো নিয়মিতভাবে করলে সময়ের মধ্যেই মাসিক হয়ে যায়। যদি কোন মহিলা তার ঋতুস্রাবের পর শরীর চর্চা করে তাহলে পরবর্তী মাসিক সঠিক সময়ে হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ব্যায়ামের কারণে শরীরের বেশি সংগঠন হয়ে বাধা পায় ফলে শরীরের রক্ত প্রবাহ কম হয়। ফলশ্রুতিতে নিয়মিত পিরিয়ড হয়। 
  • খাদ্য তালিকায় টক জাতীয় ফল যুক্ত করা: নিয়মিত মাসিক হতে সাহায্য করে বিভিন্ন ধরনের টক ফল। জলপাই মালটা তেতুল সহ আরো বিভিন্ন ধরনের টক ফল খেলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়। এক গ্লাস পানিতে হালকা চিনি এবং তেঁতুল মিশিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য রেখে দিয়ে তারপর সামান্য লবণ, চিনি ও জিরার গুড়া মিশিয়ে একটি পানীয তৈরি করে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার পান করলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
  • খাদ্য তালিকায় আদা যুক্ত করা: মাসিক কে নিয়মিত করার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর উপাদান হলো আদা। এক্ষেত্রে আপনি চায়ের সাথে আদা কুচি করে কেটে মিশিয়ে ভালোমতো সিদ্ধ করে খেতে পারেন। তাছাড়া আপনি চাইলে এক মগ পানিতে তিন চার পিস আদার কুঁচি ১০ মিনিটের জন্য সিদ্ধ করে দিনে তিনবার পান করা লাগবে। এভাবে এক মাস নিয়মিত পান করলে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
  • তিল খাওয়া: অনিয়মিত মাসিককে নিয়মিত করার জন্য আরো একটি উপকারী উপাদান হলো তিল। এক চামচ গুড়ের সাথে তিলভাজার গুড়া মিশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন খেলে শরীরের হরমোন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মাসিকের সমস্যাটি সমাধান হয়ে যায়।
  • আপেল সাইডার ভিনেগার: রক্তের ইনসুলিন ও ব্লাড সুগার কমানোর জন্য খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার পানিতে মিশ্রণ করে সেই পানি পান করার ফলে মাসিক নিয়মিত হয়।
  • জিরা খাওয়া: জিরাতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা বিদ্যমান রয়েছে। জিরার রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে সেই পানি পান করলে অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার সমস্যা কে সমাধান হয়ে যেতে পারে।
  • দারুচিনি খাওয়া: দারুচিনি শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে এবং খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আগুন বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যদি গরম দুধের সাথে দুই চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে প্রতিনিয়ত পান করেন তাহলে আপনার অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা অতি জলদি সমাধান হয়ে যেতে পারে।
  • হলুদ: পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ভেষজ গুলোর মধ্যে হলুদকে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। হলুদে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিস্পাসমোডিক‌ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি মাসিকের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এই হলুদ বিভিন্ন উপাদানের সাথে খাওয়া যায়। সাধারণত দুধ, গুড় বা মধুর সাথে মিশিয়ে হলুদ খাওয়া যায়। অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে প্রতিদিন হলুদ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
  • অ্যালোভেরার শরবত: এমেয়েইনাগোগ নামের উপাদান এলোভেরার পাতাতে বিদ্যমান থাকে। এই উপাদানটি বিদ্যমান থাকার কারণে এলোভেরা মাসিক নিয়মিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ও পেটের সমস্যা দূর করার জন্য এলোভেরা বেশ উপকারী উপাদান। রোজ সকালে নাস্তার আগে মধুর সাথে এলোভেরার জেলের রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করা গেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তবে এটি মাসিক চলাকালীন খাওয়া যাবেনা।
  • স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন: সুস্থ সবল ভাবে জীবন যাপন করলে মানসিক চাপ কম থাকে। এবং সঠিক পরিমাণের সুষম খাদ্য গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর হয়ে যায়। শরীর ও মন ভালো থাকলে পর্যাপ্ত ঘুম হয় এবং মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। এজন্য স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যাটি দূর হয়ে যেতে পারে।যদি সকল ধরনের উপায় ব্যবহার করার পরও অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যার সমাধান না হয়, তবে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।

লেখক এর মন্তব্য

প্রতিটি মেয়ের উচিত তার শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। যদি কোন মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী গ্রহণ করা লাগবে। আজকে আমরা আমাদের পোস্টে অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই পোস্ট সম্পর্কিত যে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে আপনার মতামত দিন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url