ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি ও পরিচর্যা - ছাদ বাগানের উপযুক্ত গাছের তালিকা

গাছপালা, ফুল, ফল আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত করে। আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা। বর্তমানে অনেকে শখের বসে নিজেদের বাসার ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল সহ নানা রকমের গাছ লাগিয়ে থাকে। ছাদে এভাবে গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করা বর্তমানে ছাদ বাগান নামে পরিচিত। ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানা থাকলে এবং হাত বাগানের উপযুক্ত গাছের তালিকা জানলে সুন্দরভাবে ছাদের উপর বাগান তৈরি করা যায়।
ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি, পরিচর্যা - ছাদ বাগানের উপযুক্ত গাছের তালিকা
ছাদ বাগানে ফুল, ফলমূল, শাকসবজি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপন করা যায়। অনেকে শখের বসে ছাদ বাগান করে অন্যদিকে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ছাদ বাগান করে। এমন অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান চাষ করে মাসে তা বিক্রয়ের মাধ্যমে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করে।

ছাদ‌ বাগান মানে কি?

সাধারণত ছাদের উপরে শখের বসে অথবা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায় মেনে বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল ও শাকসবজির চাষাবাদ করাকেই ছাদ বাগান বলা হয়। এটিকে ইংরেজিতে Rooftop Garden বলা হয়। অনেকে এটি শখের বসে সময় কাটানোর জন্য করে থাকে। আবার এটি থেকে অনেকে আয় বা উপার্জন করে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা। ছাদ বাগান করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয় , বিভিন্ন ধরনের টাটকা শাক সবজি ভোগ করা যায় এবং অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। সঠিকভাবে ছাদ বাগান তৈরির জন্য ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানা উচিত।

ছাদ বগান তৈরির পরিকল্পনা

প্রতিটি কাজের জন্যই পরিকল্পনা প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। ছাদ বাগান তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ছাদ বাগান তৈরি করতে হয়। কারণ ছাদের ওপর অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী গাছপালা রাখলে ছাদের ক্ষতি হতে পারে। এবং এমন ধরনের গাছপালা ছাদে লাগানো উচিত যেগুলোতে দ্রুত পানি নিষ্কাশিত হতে পারে। তুলনামূলক বড় বা ভারী গাছ গুলোকে ছাদের কলাম বা বিম এর কাছে স্থাপন করা উচিত। এক কথায়, সব সময় মাথায় রাখতে হবে যেন ছাদে গাছ লাগানোর ফলে ছাদের কোন সমস্যা না হয়। যে সকল বিল্ডিং এর ছাদ দুর্বল অর্থাৎ গাছপালার ওজন বহন করার মতন মজবুত নয় এমন ছাদে ছাদ বাগান করা যাবে না। এই সকল বিষয় সমূহ বিবেচনা করে ছাদ বাগান তৈরি পরিকল্পনা করতে হবে।

ছাদ বাগান তৈরীর ক্ষেত্রে পূর্বে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে যে ছাদের কোন কোন অংশে কি কি গাছ লাগাবেন। এবং ফাঁকা ফাঁকা করে লাইন অনুযায়ী গাছ লাগানো উচিত। এতে করে চলাচলের কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না। ছাদের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী নকশা করা উচিত। এবং নকশাতে সকল বিষয়বস্তু উল্লেখ করা উচিত। ফলের গাছ সাধারণত ছাদের মাঝের দিকে রাখলে সুন্দর দেখা যায়। চারি ধারে ফুলের গাছ রাখা যেতে পারে। এবং নির্দিষ্ট কোন অংশে খুঁটি লাগিয়ে বা মাচা তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এর গাছ লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া আপনি টবে করে আপনার ইচ্ছামতন যে কোন গাছ লাগাতে পারেন। তাছাড়া ছাদের পাশে সিঁড়ি ঘরের দেওয়ালে কিছু রডের হুক লাগিয়ে দিলে সেখানে আপনি ঝুলন্ত অবস্থায় টব বা ফুলের গাছ রাখতে পারবেন।

সর্বদা খেয়াল করা লাগবে যে যেখানে আপনি গাছ লাগাচ্ছেন সেখানে রোদের আলো পৌঁছায় কিনা। ঋতু ভেদে গাছের স্থান পরিবর্তন করা প্রয়োজন। লক্ষ্য রাখা উচিত কোন সময় রোদের প্রভাব বেশি এবং কোন সময় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। বর্ষাকালে গাছে অতিরিক্ত ভাবে পানি দেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে গ্রীষ্মকালের সময় মত পানি দেওয়া উচিত। তাছাড়া ছাদ বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসার শেড তৈরি করা যেতে পারে। ছাদে বিভিন্ন ধরনের টপ বালটি অথবা ড্রাম ব্যবহার করে তাতে মাটি দিয়ে সঠিক পরিমাণে সারের প্রয়োগ করে গাছ লাগানো যেতে পারে। এই সকল বিষয় ছাদ বাগান তৈরি করার পূর্বেই ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে সকল পরিকল্পনা করে নিতে হবে।

ছাদ বাগান তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ 

ছাদ বাগান তৈরি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উপকরণের প্রয়োজন পড়ে থাকে। এই সকল উপকরণ ব্যবহার করার মাধ্যমে ছাদ বাগান সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়। হাত বাগান তৈরির ক্ষেত্রে যে সকল উপকরণ প্রয়োজন সেগুলো নিচে দেওয়া হল।
  • ছাদ বাগান তৈরি করার জন্য প্রথমত একটি মজবুত এবং খোলা পরিষ্কার ছাদ প্রয়োজন।
  • বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানোর জন্য মাটির টব, হাফড্রাম, ও প্লাস্টিক বা স্টিলের ট্রে এর প্রয়োজন।
  • ছাদের বিভিন্ন স্থানে কাঠ বা লোহা দ্বারা তৈরি ফ্রেম এঁটে বের বানানো প্রয়োজন।
  • মাটি শোধনের জন্য ফরমালডিহাইড ব্যবহার করে কোন একটি পলিথিন দিয়ে ৪/৫ দিনের জন্য মাটি ঢেকে রেখে দেওয়া উচিত।
  • পরিচর্যার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কোদাল, কাচি, বালতি,খুরপি এবং স্প্রে মেশিন।
  • মাটির সাথে জৈব সার হিসেবে সার হিসেবে দোআঁশ মাটি, পচা গোবর, ছাই মিশানো প্রয়োজন।
  • পানি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা লাগবে।
  • যে সকল গাছ লাগাবে সেগুলোর চারা বা কলম অথবা বীজ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা লাগবে।

ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি ও পরিচর্যা

ছাদ বাগান তৈরিতে বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের মাটির টব ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া প্লাস্টিকের টব বা গ্রাম্য ব্যবহার করা যেতে পারে‌। যদি হাফ ড্রাম ব্যবহার করা হয় তাহলে এই গ্রামের নিচের অংশে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য এক ইঞ্চি বেশ অনুযায়ী চার-পাঁচটি ছিদ্র করে দিতে হয়। সে সকল ছিদ্রগুলোর উপরে সাধারণত অন্য মাটির টবের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে দিতে হয়। গ্রামের নিচে ২ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ইটের টুকরো বিছিয়ে তার ওপর সামান্যবাদী দিয়ে ঢেকে দেওয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের জৈব সারের দ্বারা মাটি তৈরি করে নেয়া উচিত। দোআঁশ মাটি ও পচা গবর এবং ছাইসহ বিভিন্ন ধরনের মিশ্র সার মাটির সাথে মিশিয়ে ড্রামগুলো পূর্ণ করে নিতে হবে। সাধারণত ১৫-২০ দিন পর ড্রামটির মাঝ বরাবর গর্ত করে সেখানে গাছের চারাটি রোপণ করতে হয়।

চারা রোপন করার পর গাছটি সাধারণত কোন একটি লাঠির সাহায্যে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দেওয়া উচিত। এরপর গাছের গোড়াতে সুন্দরভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা উচিত। গাছটি যদি লতা প্রকৃতির হয় তাহলে মাচা দিয়ে দেওয়া উচিত। যারা রাজপাশের অপ্রয়োজনীয় আগাছা এবং চারার মরা শাখা গুলো ছাটাই করে দেওয়া উচিত। গাছের রোগব্যাধি হলে বালার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সঠিক মত এবং সময় মত সার ও পানি দেওয়া উচিত। পানিতে ৪-৫ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার বিষিয়ে গাছের পাতাতে স্প্রে করলে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া পোকামাকড়ের অতিরিক্ত সমস্যা হলে জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। 

এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে গাছের মাটি সতর্কতার সাথে পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত। খেয়াল রাখা উচিত যাতে মাটি পরিবর্তনের সময় গাছের গোড়ার কোন ক্ষতি না হয় এবং পরবর্তীতে গাছের গোড়ায় সার যুক্ত মাটি প্রয়োগ করা উচিত। গাছ লাগানোর জন্য মাটির গভীরতা সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। এই সকল বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা ছাদে বাগান তৈরি এবং সেই বাগানের পরিচর্যা করতে পারি ।

ছাদ বাগানের উপযুক্ত গাছের তালিকা

যে সকল ফলের গাছ, ফুলের গাছ ও শাক সবজির গাছ ছাদ বাগানে লাগানোর ক্ষেত্রে উপযোগী সেগুলো নিচে দেওয়া হল।

ফলের গাছ ফুলের গাছ শাক সবজির গাছ
থাই পেয়ারা গোলাপ কলমীশাক
থাই মিষ্টি করমচা বেলী ডাঁটাশাক
থাই আমড়া টগর মুলাশাক
বারি কমলা-১ শিউলি ধুন্দল
বারি আম-৩ জারবেরা লাউ
বারি মাল্টা ১ গন্ধরাজ লালশাক
বাউ জামরুল-২ জবা পালংশাক
থাই কুল-২ এলামন্ডা লেটুস
ডালিম বাগান বিলাস করলা
আমলকি অপরাজিতা শিম
বিলিম্বি অলকানন্দা মরিচ
ড্রাগন ফল জল পদ্ম মিষ্টি কুমড়া

লেখক এর মন্তব্য

আমাদের সকলেরই উচিত গাছ লাগানো এবং পরিবেশ বাঁচানো। বর্তমানে দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। এজন্য গাছ লাগিয়ে পরিবেশের সুরক্ষার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য আমরা নিজেদের ছাদ বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগাতে পারি। ছাদে এ সকল গাছপালা লাগানোর ফলে ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনি সে সকল কাজ বিক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। আশা করি, পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই পোস্ট সম্পর্কিত যে কোন তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনে আপনার মতামত দিন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url