ডায়াবেটিস কমানোর সঠিক উপায় - ডায়াবেটিস কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস হলো এমন এক অবস্থা যেই অবস্থায় আমাদের শরীর নিজে নিজে ইনসুলিন সৃষ্টি
করতে পারে না ফলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক তুলনায় বৃদ্ধি
পায়। ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সংক্রান্ত ইনসুলিনের তারতম্যের কারণে আমাদের শরীরে
রক্তে শর্করা বা চিনির তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। ফলশ্রুতিতে শরীরে বিভিন্ন
অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে অনেকেই ডায়াবেটিস কমানোর সঠিক উপায়
সম্পর্কে জানেনা। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করলে এবং নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সাধারণত অধিক চিনি যুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে গেলে শর্করা বা চিনি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত
থাকতে হবে। চর্বিযুক্ত খাদ্য ত্যাগ করতে হবে এবং পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করে
ওজন নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস বলতে কি বুঝায়?
ডায়াবেটিস বলতে সাধারণত এক ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার কে বোঝানো হয়। শরীরে
বিদ্যমান থাকা ইনসুলিন যদি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে অথবা নষ্ট হয়ে যায় তখন
ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। আমরা যখন খাবার গ্রহণ করি তখন আমাদের প্যানক্রিয়াস থেকে
ইনসুলিন নিঃসৃত হয়ে থাকে। ইনসুলিন সাধারণত খাদ্য খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত
পরিমাণ যে গ্লুকোজ থাকে সেটিকে কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি কোন সময় ইনসুলিন
উৎপাদন হওয়া বন্ধ হয়ে যায় অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ না করতে পারে তখন
শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্লুকোজটি থেকে যায়। এই অবস্থাকে সাধারণত ডায়াবেটিস বলা
হয়ে থাকে।
যদি খালি পেটে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ এর বেশি এবং খাওয়ার পর যদি ১১র বেশি
হয় তাহলে সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে। অধিকাংশ যারা ফাস্টফুড খায়
এবং শুয়ে বসে সময় কাটায় তাদের ওজন বেশি হয়। এবং এর কারণে তাদের শরীরে
ইনসুলিনের প্রতিরোধক বেড়ে যায়। ফলে যখন ইনসুলিন কাজ করতে পারে না তখন তাদের
ডায়াবেটিস হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া জিনগত কারণ এবং লাইফস্টাইল এর
কারণেও অনেক সময় ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা উচিত। এজন্য
নিয়মিত শরীর চর্চা এবং শরীরের চেকআপ করা উচিত। মাঝে মাঝে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা
দেখার জন্য ডায়াবেটিস মাপা উচিত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের উচিত সঠিক খাদ্য
ভাস গড়ে তোলা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা।
ডায়াবেটিস কত রকমের হয়ে থাকে?
জানতে পারা যায় যে, ডায়াবেটিস সাধারণত ৪ ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ-১, টাইপ-২,
জেস্টেশনাল বা গর্ভকালীন, এবং অন্যান্য এই চার প্রকারের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
- টাইপ-১ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার মানে তাদের শরীরের ইনসুলিন নষ্ট হয়ে গেছে। যদি তাদের শরীরে আলাদা করে ইনসুলিন না দেওয়া হয় তবে তারা মারা যেতে পারে। যখন আমরা অতিরিক্ত ফাস্টফুড এবং চর্বি ও চিনি যুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খায়, তখন আমাদের শরীরের এক ধরনের পরিবর্তন হওয়ার কারণে ইনসুলিন কাজ করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে আমরা যে সকল খাদ্য গ্রহণ করি সে সকল খাদ্যের অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরের জমে যায়। ধারণা করা হয় এটি অটো ইউনিয়ন প্রতিক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। প্রায় ৫ থেকে ১০ পার্সেন্ট লোকের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।৯-১৬ বছর বয়সী শিশু বা তরুণদের মাঝে এই ধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকে।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস: যাদের এই ধরনের ডায়াবেটিস আছে তারা বুঝতেই পারে না তাদের ডায়াবেটিস আছে। এই ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণের পরও ক্ষুধা মেটেনা এবং অল্প সময়ে ক্লান্তি ভাব ও ঝিম ধরা ভাব চলে আসে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, কোন স্থানে যদি কাটা বা ক্ষত হয় তাহলে সেটি সহজে শুকাতে চায় না। অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তার ডায়াবেটিস হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে ৩/৪ বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে শরীরের অনেকটা ক্ষতি সাধন হয়ে যায়। সাধারণত ৯০ থেকে ৯৫ পার্সেন্ট মানুষের এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এটি সাধারণত লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে তাই সতর্কতা অবলম্বনের খাতিরে মাঝে মাঝে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা উচিত। এটি প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সুস্থ জীবনধারা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
- জেস্টেশনাল বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: এটি সাধারণত গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হয়ে থাকে। সাধারণত ১০০ জন গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ৮ জনের এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। গর্ভকালীন শেষ তিন মাসের মধ্যে এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ তো কোন গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। যে সকল মহিলাদের রক্তে পূর্ব থেকেই রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে তাদের পরবর্তীতে গ্লুকোজের পরিমাণ অধিক হয়ে গেলে তা সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া হরমোনের পরিবর্তন এর কারণে অনেক সময় মহিলাদের ব্লাড সুগারের সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণ হল প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়, অস্বাভাবিক তৃষ্ণার অনুভূতি হয়, শরীরে ক্লান্তি ও বমি বমি ভাব আসে। যাদের এই ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত। কারণ এই গর্ভবতী মহিলাদের এই ধরনের ডায়াবেটিসের সমস্যার কারণে শিশুরা রক্তে শর্করার কম থাকার ফলে জন্ডিস হওয়া সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ সমূহ
অনেক সময় অনেক ব্যক্তি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার পরও সেটি বুঝতে পারে না।
দীর্ঘ সময় ধরে ডায়াবেটিস ধরা না পড়লে এবং এর চিকিৎসা না করলে বিভিন্ন ধরনের
সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এইজন্য সব সময় সচেতনতা অবলম্বন করে চলা উচিত। তাই
আমাদের সকলের ডায়বেটিস রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। ডায়াবেটিস
কমানোর সঠিক উপায় জানার আগে ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া
প্রয়োজন।
- ডায়াবেটিস রোগের একটি লক্ষণ হলো ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক পরিমাণে পিপাসা লাগে।
- ডায়াবেটিসের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্ষুধা বেড়ে যায়।
- সঠিকভাবে সময় মত সঠিক খাদ্য গ্রহণ না করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।
- অনেক সময় কোন কারণ ব্যতীত ওজন হ্রাস পায়।
- ডায়াবেটিসের একটি লক্ষণ হল বিরক্তিভাব ও মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।
- ডায়াবেটিসের ফলে অনেকে চোখে কম দেখে। অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।
- মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের প্রতি অধিক আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
- শরীরে বিভিন্ন স্থানে কেটে গেলে তার সহজে সারতে চায় না। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে এই সকল ঘা শুকাতে অধিক সময় লাগে।
- ডায়াবেটিস রোগের আরও একটি লক্ষণ হচ্ছে স্পর্শ বা ব্যথার অনুভূতি তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।
- ডায়াবেটিসের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শরীরের বা ত্বকের বিভিন্ন অংশে কালচে ছোপ দাগ পরে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ঘন ঘন ইনফেকশন বা সংক্রমণ এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- হাত পায়ে অসারতা ও ঝিন ঝিন ভাব করে এবং মাথা ঘুরে।
ডায়াবেটিস কমানোর সঠিক উপায়
বিভিন্নভাবে ডায়াবেটিস কমানো যায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গঠন, নিয়মিত শরীর
চর্চা করা এবং মানসিক চাপ এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস অনেকাংশে
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে, সমস্ত বিশ্বে
প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই
ডায়াবেটিস কমানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে এবং নিজের জীবন ধারাকে
পাল্টে দিতে হবে। যেকোনো রকমের মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। মিষ্টি
জাতীয় খাদ্য পরিহার করার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা সঠিক পরিমাণে রাখতে
হবে। আসুন আমরা ডায়াবেটিস কমানো সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গঠন: ডায়াবেটিস কমাতে চাইলে সর্বপ্রথমে নিজের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে। নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এইজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। যে সকল খাদ্যের শর্করার পরিমাণ কম আছে সেই ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনেই শাক সবজি ফলমূল ও চর্বি মুক্ত মাংস গ্রহণ করা জরুরী। এবং বিভিন্ন ধরনের জাঙ্ক ফুড, মিষ্টি পানীয় ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীর সুস্থ সবল থাকে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের উচিত নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময় করে শরীরচর্চা করা। কারণ শরীর চর্চা করার ফলে শরীরের ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণশীল পর্যায়ে আনা সম্ভব। নিয়মিত দুই ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্নভাবে শরীর চর্চা করতে পারে। যেমন:-সাঁতার কাটা, প্রতিনিয়ত জগিং করা বা হাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অনেক সময় অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এইজন্যে ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত নিজেদের ওজনকে একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা। ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে এবং ওজন কমানোর ফলে রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা একটি নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়। এই জন্য ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে নিয়মিত শরীর চর্চা ও সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ওজনকে একটি স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত।
- মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার: অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায়। এই জন্য ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে সকল ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিংকস, চিনি, পাস্তা, কেক, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা উচিত। এবং প্রতিনিয়ত ওজন মাপা উচিত।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: অনেক সময় মানুষের চাপের কারণে রক্তের শর্করার মাত্রা প্রভাবিত হয় এবং হরমোনের প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গ্লুকোজ উৎপাদন বেড়ে যায়। এইজন্যে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইয়োগা, ধ্যান ও শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। তাছাড়া মানসিক প্রশান্তির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
- মাদকদ্রব্য ত্যাগ: অনেকে ধূমপান এবং মদ্যপান করে থাকে যা ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। এজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য সেবন পরিহার করতে হবে সম্পূর্ণরূপে। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত ধুমপান ও মদ পান ত্যাগ করা।
- রক্তে চিনির মাত্রা নিয়মিত চেক করা: যাদের ডায়াবেটিস আছে অথবা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন ব্যক্তিদের উচিত মাঝে মাঝে নিজেদের রক্ত পরীক্ষা করা। বর্তমানে বিভিন্ন ফার্মেসিতে খুব অল্প মূল্যের বিনিময়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই জন্য যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে তারা যদি ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে পূর্ব থেকে সচেতনতা অবলম্বন করে তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষার পর রক্তের চীনের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের যত দ্রুত সম্ভব পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
- রাতে দেরিতে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ: রাতে দেরি করে খাবার অভ্যাস ত্যাগ করে দিতে হবে। কারণ এই অভ্যাসটি খুব একটা সুবিধার নয়। এ অভ্যাস দ্রুত ত্যাগ না করলে এবং রাতে নিয়মিত যদি দেরি করে খাবার খান তাহলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন রাত ৮:৩০ এর আগে খাওয়ার গ্রহণ করা উচিত।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা: রাতে খাবারের কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। একজন ব্যক্তির সারা দিনে মোট তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা উচিত। রোজ এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার ফলে ব্লাড সুগারের লেভেল অনেকটা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে। তবে একটি বিষয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে খাওয়ার পরপরই আপনি পানি পান না করেন। খাওয়ার পরপর পানি পান করলে হজমজনিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য খাওয়ার পর বিরতি রেখে কিছুক্ষণ পর পানি পান করা উচিত। এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর ডায়েট তৈরি: বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও পুষ্টিবিদদের কাছে ব্যক্তিগত ডায়েট তৈরি করে নিয়ে, সে অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এতে করে ওজন একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। সঠিক ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ সবল থাকে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লবণ বা চর্বিযুক্ত খাবার যদি আপনি কমিয়ে দেন তাহলে কোলেস্টেরলের মাত্রা একটি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। তার ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়
বর্তমানে ডায়াবেটিস একটি বিরাট বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ডায়বেটিসের
জন্য ঔষধ কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এটা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা
পরবর্তীতে কিডনি, হার্ট ,চোখ ও লিভারের বিভিন্ন সমস্যার শিকার হয়ে থাকে। এবং
এই ডায়বেটিসের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
তাই শুরু থেকে সচেতন থেকে ডায়াবেটিস কমানোর সঠিক উপায় সম্পর্কে জেনে সেই
অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা
তৈরি করার মাধ্যমে এবং একটি সুষম ডায়েট চার্ট তৈরি করার মাধ্যমে
ডায়াবেটিসকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এতে করে ঔষধ ছাড়াই
ডায়াবেটিস কমানো যায় প্রাকৃতিক ও ঘরোয়াভাবে। আসুন জেনে নিয়ে কম খরচে
কিভাবে ওষুধ ছাড়াই আসুন জেনে নিয়ে কম খরচে কিভাবে ওষুধ ছাড়াই বাসায় বসে
ডায়াবেটিস কমানো যায়।
- চর্বি সমৃদ্ধ মাছ: বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ও চর্বিযুক্ত মাছ যেমন সেলমন, হেরিং ও আরো অন্যান্য মাসে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে। এসব মাছ খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- পেঁয়াজ: রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের সব থেকে কার্যকরী এবং সহজ উপায় হল পেঁয়াজ খাওয়া। পেঁয়াজের রস শরীরের ৫০% শর্করার পরিমাণ রক্ত থেকে কমাতে পারে। মেটফরমিন এবং অ্যালিয়াম সিপা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এইজন্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পেঁয়াজের খাওয়া একটি সস্তা ও সহজ ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়।
- নয়ন তারা উদ্ভিদ: নয়ন তারার ফুল ডায়াবেটিস মুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নয়ন তারা গাছের শুকনো মূল ও ফুল এক গ্রাম সমপরিমাণ নিয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে সেই পানি ছেকে নিয়ে ফুটিয়ে পান করতে হবে । এইভাবে প্রতিদিন নিয়মিত রূপে এই পানিটি সকাল ও রাতে পান করতে হবে। নিয়মিতভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন এই পানি পান করার পর রক্ত পরীক্ষা করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিসের ঘনঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যাটি এই পানি পান করার মাধ্যমে অনেকাংশে কমে যায়।
- করলা: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকরী সবজি হল করলা। ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে কার্যকরী রূপে সাহায্য করে থাকে করোলা। করলা এর বিচি ছেড়ে দিয়ে অবশিষ্ট অংশের জুস বানিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করার মাধ্যমে ঔষধ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- পানির ফুল: সোলান পরিবারের সাথে সম্পর্কিত একটি বর্ণ প্রজাতির ফুল হলো পানির ফুল যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবথেকে বেশি কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত। এই ফুলের উৎপত্তি স্থল হল ভারত। প্রতিদিন একটু একটু করে এই পানির ফুল যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে। প্রতি রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস পানির মধ্যে ১২-১৩ টি পানির ফুল সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেটি ছেঁকে নিয়েখালি পেটে পান করতে হবে। নিয়মিত সুষম খাদ্য এবং পানির ফুল পান করলে ইনসুলিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে এবং ডায়াবেটিস ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় কমানো যায়।
- ডুমুর: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ডুমুর। ডুমুরে বিদ্যমান থাকা ফাইবার শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ডুমুরে রয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান যা ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।
- আমের পাতা: পরিষ্কার ও নরম কোমল আমের পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আমের পাতা খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে ইনসুলিন এর মাত্রা একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে। ডায়াবেটিস কমাতে আমের পাতা খাওয়া একটি প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া কার্যকরী উপায়। আমের পাতায় ট্রনিং এবং ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন হয়ে থাকে, ফলশ্রুতিতে এটি ডায়াবেটিসের প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী বলে বিবেচিত। ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে আমের পাতা ধুয়ে গুঁড়ো করে শুকিয়ে ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে আমের পাতা ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। আমের পাতা শুকানো হলে পরবর্তীতে তা গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে সকাল এবং রাত দুই বেলা পান করতে হবে। অথবা গ্লাসে কিছু তাজা অথবা গ্লাসে কিছু সতেজ আমের পাতা ভিজিয়ে রেখে সেগুলো সিদ্ধ করে সারারাত রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস অনেক অংশে কমানো সম্ভব।
- মেথি: মেথিতে অনেক পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। মেথি আমাদের হজম শক্তিকে ব্রাশ করে ফলে রক্তের সুগার সঠিকভাবে শোষিত হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ মেথির বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করলে ডায়াবেটিস সহজে কমানো যায়। তাছাড়াও মেথির বীজের গুড়া পানির বা দুধের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
- অন্যান্য উপকরণ: চিয়া সিড, টক দই, অ্যালোভেরা, দারচিনি এই সকল উপাদান ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়। নিয়মিত দারুচিনির গুড়া চা বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন প্রক্রিয়া উদ্বৃত্ত হয় এবং রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায়। টক দই রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন কমিয়ে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করে। চিয়া সিডস কেউ ফাইবার থাকার কারণে এটি রক্তে চীনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রেখে ডায়াবেটিস প্রাকৃতিক ভাবে কমিয়ে দেয়।
- শরীরচর্চা বা ব্যায়াম: সুস্থ জীবন যাপনের সর্বোত্তম একটি উপায় হল শরীর চর্চা ব্যায়াম। নিয়মিত শরীর চর্চা করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ডায়াবেটিস রোগী যখন নিয়মিত হাঁটা চলাফেরা ও ব্যায়াম করেন তখন তার শরীরের ইনসুলিন অধিক পরিমাণে কাজ করে এই জন্য ডায়াবেটিস কমানোর একটি ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় হলো শরীরচর্চা বা ব্যায়াম।
ডায়াবেটিস কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ একটি স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট চার্ট তৈরির ফলে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান হয় এবং শরীর ও মন ভালো থাকে। তাই ডায়াবেটিস কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনি কে অধিক পরিমাণে সাহায্য করবে ডায়াবেটিস কমার ক্ষেত্রে। অপরদিকে কিছু খাদ্য আছে যেগুলো আপনার ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেবে। এই সকল বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস কমানোর খাদ্যতালিকা নিচে প্রস্তুত করা হলো।
ফলমূল | শাকসবজি | শ্বেতসার | প্রোটিন | দুগ্ধজাত খাবার |
---|---|---|---|---|
বরই, বাঙ্গি | গাজর, মটরশুঁটি, বরবটি, শিম | লাল বা বাদামী চালের ভাত | গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস | পনির, দুধ |
তরমুজ, জাম্বুরা | মাশরুম, শশা, পালংশাক | লাল আটার রুটি বা পাউরুটি | বিভিন্ন তৈলাক্ত মাছ | ছানা, লাচ্ছি |
খেজুর, আভোকাডো, পীচ | বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, লেটুস | নানরুটি, পাস্তা, পাউরুটি ও কাঁচকলা | শিমের বীচি,বাদাম, ডিম সেদ্ধ | দই, মাঠা |
লেখক এর মন্তব্য
আজকে আমরা আমাদের পোস্টে ডায়াবেটিস কমানো সঠিক উপায় এবং ডায়াবেটিস
কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বর্তমানে আমাদের
সমাজে অনেক ব্যক্তি ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। সঠিক
খাদ্যাভাস গঠন করে তুললে এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজনকে নিয়ন্ত্রিত
রাখতে পারলে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি যেসকল খাদ্য
গ্রহণ করলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায় সে সকল চিনিযুক্ত, অতিরিক্ত
চর্বী ও লবণ যুক্ত, বিস্কুট, চিপস, আইসক্রিম, চকলেট, কেক, মাখন, কোল্ড
ড্রিংকস, জাঙ্ক ফুড ও ফাস্টফুড সহ বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে
চলা উচিত।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পুষ্টি সম্পর্কে যেকোনো তথ্য জানতে চাইলে
আমাদের কমেন্ট সেকশনে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিন।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url