ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার কারণ ও দূর করার উপায়
ওভারিয়ান সিস্ট অথবা ডিম্বাশয় এর সিস্টে বর্তমানে অনেক নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
সাধারণত ডিম্বাশয় এর পানিতে পরিপূর্ণ থলে কে সিস্ট বলে অভিহিত করা হয়। ফিস্ট
বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন: ডারময়েড সিস্ট, সিস্টোনোমা, ফাংশনাল সিস্ট,
পলিসিস্টিক সিস্ট ইত্যাদি। হরমোন জনিত সমস্যা, অনিয়মিত সেক্স লাইফ এবং কম বয়সে
ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারন থেকে সিস্টের উৎপত্তি হতে পারে। অনেক সময় দেরিতে
সন্তান বা দেরিতে বিয়ে করা ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। এই সমস্যা দূর
করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। ডিম্বাশয়ের সিস্ট অনেক
সময় প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে এবং চিকিৎসা ব্যতীত একটি নির্দিষ্ট সময় পর ঠিক
হয়ে যায়।
সিস্ট হওয়ার পর অপেক্ষা করতে হবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যাদের সিস্ট নিজে
থেকে কমে যায়। এজন্য মাঝে মাঝে আল্ট্রা সাউন্ড করে খেয়াল রাখতে হবে যে সিস্ট
বেড়ে যাচ্ছে কিনা। বেশি সমস্যা দেখা দিলে অস্ত্রপচার বা অপারেশনের মাধ্যমে সিস্ট
অপসারণ করা যায়। সিস্ট পরিপূর্ণরূপে ভালো করতে চাইলে ফিস্ট দূর করার উপায়
সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী।
ওভারিয়ান সিস্ট বলতে কি বুঝায়?
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় এর সিস্ট বলতে বোঝানো হয় যে, ডিম্বাশয় এর ভিতরে
বিদ্যমান একটি তরল ভরা থলি। এগুলোর সাধারণত কোন উপসর্গ না থাকলেও এগুলোর ফলে
তলপেটে এবং পিঠের নিচের অংশে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। সিস্টার ফলে ডিম্বাশয় কে
ঘিরে ছোট ছোট সিস্ট পুতির মালার মত হয়ে থাকে। ওভারিয়ান সিস্টার ফলে ওভারির
স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই ধরনের রোগ
হয়ে থাকে। অনেক সময় বংশগত এবং জিনগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায়
কম থাকার কারণে ও সিস্ট হওয়া সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুন: অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ ও সমাধান
ঠিকমতো শরীরচর্চা না করা, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের
অভাবে এই রোগ হতে পারে। বর্তমানে এই সিস্ট মেয়েদের একটি বড় শারীরিক সমস্যা হয়ে
দাঁড়িয়েছে। আজকের পোস্টে আমরা ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার কারণ ও দূর করার উপায়
সম্পর্কে জানতে পারবো।
ওভারিয়ান সিস্ট এর প্রকারভেদ
সিস্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকলেও,প্রধানত দুই প্রকারের হয়।
ফাংশনাল বা ফিজিওলজিক্যাল বা শারীরবৃত্তীয় সিস্ট। | প্যাথলজিকাল বা রোগের কারণে সৃষ্ট সিস্ট |
---|---|
করপাস লুটিয়াল সিস্ট | এন্ডোমেট্রিওসিস |
ফলিকুলার সিস্ট | পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম |
থিকা লুটেইন সিস্ট | ডারময়েড সিস্ট |
ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার কারণ
বিভিন্ন সমস্যার কারণে ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে। আসুন আমরা ওভারিয়ান সিস্ট
হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- অনেক সময় স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সিস্ট হয়ে থাকে।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করার ফলে, অলস ও বিশৃংখলভাবে জীবন যাপন করার ফলে সিস্ট হতে পারে।
- অনেক সময় হরমোন জনিত ভারসাম্যহীনতার ফলশ্রুতিতে ডিম্বাশয় এ অতিরিক্ত পরিমাণে ইস্ট্রোজেন তৈরি হওয়া সম্ভাবনা থাকে, যার ফলশ্রুতিতে ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে।
- জরায়ুর টিস্যু রেখা তার নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে বেরিয়ে আসার ফলে এন্ডোমেট্রিওসিস ডিম্বাশয় সিস্ট তৈরি হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং ফাস্টফুডের প্রতি আসক্ততা থাকার কারণে সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- দেরিতে সন্তান নেওয়ার কারণে অনেক সময় ফিট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক সময় গর্ব অবস্থায় থাকাকালীন সিস্ট তৈরি হতে পারে এবং পাবলিক অঞ্চলে সংক্রমণের ফলে ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- কম ক্ষেত্রেই টিউমারের কারণে ডিম্বাশয় এর সিস্ট হতে পারে।
- সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভাবে সিস্ট হওয়া সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক সময় অনিয়মিত সেক্স লাইফ এর কারনে সিস্ট দেখা দিতে পারে।
- অল্প বয়সের ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে অনেক সময় সিস্ট হতে পারে।
ওভারিয়ান সিস্ট এর লক্ষণ সমূহ
প্রতিটি রোগের মতন ওভারিয়ান সিস্ট এর কিছু লক্ষণ রয়েছে। ওভারিয়ান সিস্টার এই
সকল লক্ষণ সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো।
- ওভারিয়ান সিস্ট এর কারনে তলপেটে ব্যথা হয়। বিশেষ করে সহবাসের সময় তলপেটে ব্যথা করে।
- সিস্ট হওয়ার একটি লক্ষণ হল অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
- জরায়ুর অস্বাভাবিক রক্তপাত এবং জরায়ুতে দাগ হয়ে যাওয়া সৃষ্টির একটি লক্ষণ।
- মাসিক শুরুর পূর্বে এবং মাসিকের শেষের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়।
- অনেক সময় ডিম্বাশয় এর সিস্ট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে পেটের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং পেট ফুলে যায়।
- ডিম্বাশয় সিস্ট ফেটে গেলে তলপেটে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি হয়।
- সিস্ট এর আরও একটি লক্ষণ হল ক্লান্তি, মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাব অনুভূত হয়।
- স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন বৃদ্ধি পায়।
- মুখের এবং শরীরের লোম ও চুল এর পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
- অনেক সময় সিস্ট এর কারণে পেলভিক এনাটমিতে চাপের সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলশ্রুতিতে মন থেকে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসার মাধ্যমে ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়
চিকিৎসার মাধ্যমে ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার জন্য সিস্টের আকার ধরন ও উপসর্গ
বিবেচনা করা জরুরী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় এর সিস্ট এর চিকিৎসার ব্যতীত
স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্ট সেরে ওঠে। কিন্তু যদি সিস্ট বড় হয়ে যায় এবং
বিভিন্ন অস্বস্তিকর সমস্যার সৃষ্টি হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব স্ত্রীর রোগ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। সিস্ট সাধারণত
চিকিৎসা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে কয়েক মাসের মধ্যে চলে যায়। এজন্য আমাদের উচিত
অপেক্ষা করা যাতে সিষ্টের সমস্যা নিজে থেকে সমাধান হচ্ছে কিনা, সেটাই লক্ষ্য
রাখা।সিস্ট বাড়ছে কি কমছে তা দেখার জন্য মাঝে মাঝে আল্ট্রা সাউন্ড ব্যবহার
করা।
অতিরিক্ত সমস্যা হলে অস্ত্র প্রচার বা সার্জারির মাধ্যমে সিস্ট অপসারণ করা।
সাধারণত যদি ফিস্ট ফেটে যায় এবং সেখান থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা
যায় তাহলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সার্জারি করার মাধ্যমে সিস্ট
অপসারণ করা জরুরী। জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবনের মাধ্যমে হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ
করার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টের বৃদ্ধি জনিত সমস্যার রোধ করা সম্ভব । এভাবে সিস্টার
আকার কমানোর জন্য ঔষধ সেবন করা যেতে পারে। আর ক্যান্সার যুক্ত সিস্টের
ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির মত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন
অনুসারে করা প্রয়োজন।
অধিকাংশ সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ফিস্ট তৈরি হয়। এইজন্য
সিস্ট রোধ করার ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন এর নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরী।
এইজন্যে শরীরে ইস্ট্রোজেনের এর মাত্রা সঠিক পরিমাণে রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া
কিছু হারবাল উপায় মেনে তন্ত্রের রক্তে সঞ্চালন বৃদ্ধি করার দ্বারা
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বজায় রাখা সম্ভব। তাছাড়া পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং
অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বর্জনের মাধ্যমে সঠিক ডায়েট প্ল্যান নিশ্চিত করে সিস্ট
এর মোকাবেলা করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণে সিস্ট এর
সমস্যা দেখা দেয়, এই জন্য সিস্ট এর চিকিৎসা হিসেবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরকে
সুস্থ রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করার মাধ্যমে সিস্ট দূর করা
সম্ভব।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কম সময়ে ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়
বর্তমানে অনেক নারীরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চিন্তিত রয়েছেন।
সার্জারির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা গেলেও অনেকে সার্জারিকে ভয় পাওয়ার
কারণে তারা ঘরোয়া উপায়ে সিস্ট দূর করা সম্পর্কে জানতে চান। আসুন আমরা চিকিৎসা
ব্যথিত ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
- ভেষজ (হলুদ): আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হারবাল বা ভেষজ উপাদানের ভূমিকা অপরিসীম। কিছু কিছু হারবাল বা ভেজু উপাদান আছে যা এন্ডোক্রিম সিস্টেম সচল রাখতে সহায়তা করে থাকে। এ সকল ভেষজ উপাদান জননতন্ত্রের রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং তার পাশাপাশি হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখে। অর্থাৎ ভেষজ উপাদান হরমোন ব্যালেন্স করে এবং ওভিউলেসন নিয়মিত করতে সাহায্য করে। সিস্ট দূর করার ক্ষেত্রে হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক গ্লাস গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করার ফলে পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি ঘটে এবং রক্ত বিশুদ্ধ হয়। এজন্য ১০ থেকে ১৫ দিন নিয়মিতভাবে হলুদ মেশানো দুধ পান করা উচিত।
- পুষ্টিকর খাদ্য: সঠিক ডায়েট প্ল্যান মেনে চললে অতি দ্রুত সৃষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সবুজ শাকসবজি ফলমূল এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ডায়েট চার্ট ফলো করে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে ওজন নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে।সকল রকমের অস্বাস্থ্যকর , ফাস্টফুড এবং জাঙ্ক ফুড শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং সিস্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। এজন্যে সিস্ট মোকাবেলা করার জন্য আমাদের উচিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন করা।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ ও সাপলিমেন্ট গ্রহণ: অধিকাংশ নারীদের সিস্ট এ আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন এবং বি এম আই এর বেশি হওয়া। নারীদের উচিত তাদের ওজন একটি নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং বিএমআই ২৫ এর নিচে রাখা। ওজন নিয়ন্ত্রিত পর্যায় রাখতে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করলে সিস্ট এর সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাছাড়াও মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যায়। ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই এবং ফ্লাক্সিড ওয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে হরমোন ব্যালেন্স করে সিস্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- হরমোন: ইস্ট্রোজেন হরমোনের সাম্য নষ্ট হওয়ার ফলশ্রুতিতে ওভারিয়ান শিষ্ট এর উৎপত্তি হয়ে থাকে। ইস্ট্রোজেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ওভিউলেশন অনিয়মিত হয়ে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে সিস্ট তৈরি হয়ে থাকে। তাই এই হরমোনটি একটি ব্যালেন্স পর্যায়ে রাখা অত্যন্ত জরুরী। এই হরমোন বৃদ্ধি করার জন্য প্রোটিন এবং প্রসেসড মাংস গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়াও প্লাস্টিকের বোতলের মাধ্যমে পানি পান করার ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় যা দ্বারা শরীরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- হিটিং প্যাড ব্যবহার ও মালিশ করা: ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে এবং রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে হিটিং প্যাড ব্যবহারের মাধ্যমে তাপ অথবা সেক দিলে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়। যখন সিস্ট এর কারণে তলপেট ব্যথা করে তখন তলপেটে এবং পিঠের নিচের দিকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত হিটিং প্যাড ব্যবহার করা উচিত। এতে ব্যথা অনেকটা কমে যায়। ওভারিয়ান সিস্ট এর ব্যথা আশেপাশের পিসি গুলোতে যেমন: নিতম্ব, উরু, পিঠ এবং তলপেটে ছড়িয়ে যায়। তখন হালকা মাসাজ করার মাধ্যমে অনেকটা ব্যথা কম করা সম্ভব।
- শরীর চর্চা বা ব্যায়াম: স্ট্রেচিং বা শরীর চর্চা ডিম্বাশয় এর সিস্টের ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি । এইজন্য নারীদের মাঝে মাঝে উচিত হালকা স্ট্রেচিং, ইয়োগা এবং শরীরচর্চা করা।
- বিশ্রাম ও চিত্ত বিনোদন: সিস্ট এর সমস্যার ফলে অনেকে চিন্তিত হয়ে থাকে। এমতা অবস্থায় চিন্তা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং চিত্ত বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ রেখে নিজের শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে পারে এবং মনকে উৎফুল্ল রাখতে পারে। তাছাড়া চিত্ত বিনোদন এবং বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যাথার তীব্রতা কমানো এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব।
ওভারিয়ান সিস্ট হলে কি বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়?
অনেক নারীর মনেই এই প্রশ্ন থাকে যে সিস্টের সমস্যা হলে বাচ্চা নিতে কোন সমস্যা
হয় কিনা? জরায়ুতে সিস্ট থাকার পরেও গর্ভধারণ করা সম্ভব। তবে এন্ডোমেট্রিওসিস
এর মত সমস্যা হলে পরবর্তীতে ফার্টিলিটিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণ তো কম
বয়সে গর্ভধারণ করা হলে ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার ঝুঁকি ও সম্ভাবনা অধিক পরিমাণে
থাকে। এ ধরনের সিস্ট কোন সমস্যা না করলেও পরবর্তীতে এই সিস্ট বাড়তে থাকলে
নারীরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রসবের সময় সিস্টগুলো
পিছিয়ে বা ফেটে যেতে পারে।
মহিলাদের উচিত গাইনিকোলজিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা।
সাধারণত পাত সেন্টিমিটারে নিজের সাইজের সিস্ট অপসারণে তেমন একটি প্রয়োজনীয়তা
নেই। লক্ষ্য রাখতে হবে যে গর্ভাবস্থার ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে ফিস্ট এর
সার্জারি করা যেতে পারে কিন্তু ১৫ সপ্তাহের আগে এবং ২৩ সপ্তাহের পর সার্জারি
করা যাবে না। সিস্টের সাথে বাচ্চা হওয়া বা না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই বললেই
চলে।
লেখক এর মন্তব্য
বর্তমানে নারীরা সিস্ট এর সমস্যা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত থাকে। তাদের উদ্দেশ্যে
আজকের এই পোস্টটি করা হয়েছে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, সিস্ট অনেক ক্ষেত্রে নিজের
থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দূর হয়ে যায় বা ভালো হয়ে যায়। তবে সৃষ্টির সমস্যা
অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে সার্জারি, অস্ত্রোপচার বা অপারেশনের মাধ্যমে তা
অপসারণ করা সম্ভব। সিস্ট সাধারণত ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও হরমোনের
সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। মহিলাদের উচিত এ সকল বিষয়ে সচেতন রাখা এবং নিয়মিত
চর্চার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখা।
আমাদের এই পোস্টটিতে ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার কারণ ও তা দূর করার উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের এই পোস্ট সম্পর্কে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন বা
তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট সেকশনে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিন। আশা করি, পোস্টটি
পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url