পেট ব্যথা হওয়ার কারণ ও পেট ব্যথা দূর করার উপায়
আমাদের সাধারণত বিভিন্ন কারণে পেটব্যথা হয়ে থাকে। মানসিক চাপ, পেপটিক আলসার,
জীবাণুর আক্রমণ, গ্যাসের সমস্যা, কিডনিতে পাথর সহ আরো বিভিন্ন কারণে পেট ব্যাথা
হয়ে থাকে। সাধারণত আদা চা, লেবু চা, দই, কাঁচা কলা, আজওয়াইন সহ বিভিন্ন ধরনের
পেট ব্যথার ঔষধ সেবনের মাধ্যমে পেট ব্যথা দূর করা সম্ভব। আসুন জেনে নিই পেট
ব্যাথা হওয়ার কারণ ও পেট ব্যথা দূর করার উপায়।
পেট ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা মনে হলেও এটি খুবই কষ্টদায়ক। এবং অতিরিক্ত পেট
ব্যথার ফলে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই পেট ব্যাথা হলে
আমাদের অবহেলা না করে পেট ব্যাথা হওয়ার কারণ ও পেট ব্যথা দূর করার উপায়
সম্পর্কে জানা জরুরি। এবং পেট ব্যাথা দূর করার উপায় গুলো মেনে চলা উচিত।
ভূমিকা
অনেকের নিত্যদিনের একটি সমস্যা হল পেট ব্যথা। সাধারণত অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে
খাদ্য গ্রহণের ফলে পেট ব্যথা করে। তাছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে পেট ব্যাথা হতে
পারে। গ্যাসের কারণে, বদহজমের কারণে, জীবাণু জনিত সমস্যার কারণে পেটের ব্যাথা
হয়ে থাকে। তাই আমাদের পেট ব্যাথা হওয়ার কারণ ও পেট ব্যথা দূর করার উপায়
সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরী। এই পেট ব্যথা দূর করার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া
পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন: লেবুর রস পান করা, আদা চা পান করা, হিটিং প্যাড
ব্যবহার করা এবং কাঁচা গলা ও দইয়ের সেবনের মাধ্যমে সহজেই পেট ব্যথা দূর করা
সম্ভব।
পেট ব্যথা কেন হয়?
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে পেট ব্যথা হয়ে থাকে। এই পেট ব্যথার ফলে প্রচুর
কষ্ট হয়। সাধারণত যে সকল কারণে পেট ব্যথা করতে পারে, সে সকল কারণ নিচে আলোচনা
করা হলো:
- গ্যাসের কারণে পেট ব্যথা করে।
- বদহজমের কারণে পেট ব্যথা করতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ জনিত সমস্যার কারণে পেট ব্যথা করতে পারে।
- আলসারের কারণে পেট ব্যথা করতে পারে।
- কিডনিতে পাথরের কারণে পেট ব্যথা করতে পারে।
- মানসিক চাপের কারণে পেট ব্যাথা করতে পারে।
- বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে পেট ব্যথা করতে পারে।
- এপেন্ডিসাইটিস এর কারনে পেটব্যথা করতে।
- ডায়রিয়ার হলে পেট ব্যাথা করতে পারে অনেক সময়।
- নারীদের ঋতুস্রাব এর সময় পেটব্যথা হতে পারে।
- ফুড পয়জনিং এবং এলার্জিজনিত সমস্যার কারণেও পেট ব্যথা হতে পারে।
প্রচন্ড পেট ব্যাথা হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে পেট ব্যাথা হয়ে থাকতে পারে। হঠাৎ করে পেট ব্যাথা শুরু করলে তা
থেকে গুরুতর করো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এইজন্যে দ্রুত পেট ব্যথা করলে
তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরী। যদি পেট ব্যাথা হওয়ার কারণ ও পেট ব্যথা দূর
করার উপায় সম্পর্কে না জানা থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে
পারে। চলুন জেনে নি যে সকল কারণে তীব্র পেট ব্যথা হয়।
- এপেন্ডিসাইটিস:এপেন্ডিসাইটিস এ আক্রান্ত হলে প্রচন্ড পেট ব্যথা শুরু হয়। পেটের ডান সাইডের নিম্নভাগের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এই ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই রোগের ক্ষেত্রে তলপেটে বেশি ব্যথা করে। নাভির চারপাশে থেকে সমস্ত পেট জুড়ে ব্যথা বিস্তার লাভ করে। অন্ত্রের কৃমি, শারীরিক ট্রমা সহ বিভিন্ন কারণে এপেনডিক্স হতে পারে। এপেন্ডিসাইটের ফলে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ নাভির উপরে নিচে এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা করে।
- গ্যাস্ট্রাইটিস রোগ:গ্যাসট্রাইটিস বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা। অতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল খাবার খাওয়ার ফলে পেটের ভেতর জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। এটিকে সাধারণত গ্যাসট্রাইটিস বলা হয়। এটি হলো পেটের নরম সহিস মা আস্তরণের একটি প্রদাহ। গ্যাসট্রাইটিস রোগ বৃদ্ধি পেয়ে আলসারের সৃষ্টি হতে পারে ফলে পেটে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা করতে পারে। পেন গ্যাসট্রাইটিস এর ফলে পুরো পেট প্রচন্ডভাবে ব্যথা করে এবং এন্ট্রাল গ্যাসট্রাইটিস এর ফলে পেটের নিচের অংশ ব্যথা করে।
- কিডনিতে পাথর: কিডনিতে পাথর হওয়া একটি জটিল রোগ। এই পাথর যখন মূত্রনালী দিয়ে চলাচল করে তখন পেটে প্রচন্ড পরিমানে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এই ব্যথা সমস্ত তলপেটে বিস্তারতা লাভ করে। সাধারণত শরীর থেকে পানি কমে যাওয়ার ফলে ড্রিহায় এবং ফলশ্রুতিতে কিডনিতে পাথরের তৈরি হয়। এই পাথর যখন প্রস্রাবের নালীতে নেমে আসে তখন পেট পিট সবকিছু প্রচন্ড পরিমাণে ব্যাথা করে।
- ঔষধ সেবন:মাঝে মাঝে অন্য রোগের ওষুধ খেয়ে নেওয়ার ফলে পেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, হাই প্রেসার এর ওষুধ, জ্বালাপোড়া ও ব্যথার ঔষধ গ্রহণের ফলে পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন পাওয়ার যুক্ত ঔষধের সেবনের ফলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। ফলে পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
- মানসিক চাপ:বিভিন্ন সময় মানসিক চাপের জন্য পেটের ব্যাথা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপের জন্য অনেক সময় ঠিকমতো ঘুম হয় না, ফলে মাথা ব্যথা পেট ব্যথা সহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে
- আলসার:পেটের একটি চিরচেনা পরিচিত রোগ হচ্ছে পেপটিক আলসার। পেটের উপরের অংশে মাঝের দিকে ব্যথা অনুভূত হয় পেপটক আলসারের ফলে। সাধারণত পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার ফলে আলসারের সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীর এই আলসারকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলা হয়। মাদকদ্রব্য সেবন, ধূমপান করা এবং অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। পেটে আলসার হলে পেটের তীব্র জ্বালাপোড়া করে এবং অসহনীয় ব্যাথা হয় ফলে পেট ফুলে যায়।
পেট ব্যথা দূর করার উপায়
পেট ব্যথা একটি বিরক্তিকর সমস্যা। কিন্তু এই সমস্যাকে ছোটখাট সমস্যা বলে অবহেলা
করা একদম উচিত নয়। পেট ব্যথা হলে ব্যাথানাশক ঔষধ সেবনের ফলে পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পেট ব্যাথা হলে ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক
উপায়ে তা সমাধান করা উচিত। আসুন জেনে নিই পেট ব্যথা দূর করার কিছু উপায়।
- আদা বা আদা চা পান করা: আদা শরীরের জন্য একটি উপকারী খাদ্য বস্তু। আদাতে রয়েছে ভিটামিন সি ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ। এই আদা চাষে বনের ফলে গলা ব্যাথা মাথা ব্যাথা জ্বর সর্দি কাশি দূর করা সম্ভব। আদা চা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। অনেক সময় কন্সটিপেশনের কারণে পেট ব্যথা হয়ে থাকে, আদা চা পান করলে কন্সটিপেশনের সমস্যা দূর হয় এবং পেট ব্যথা কমে যায়। তাছাড়া আধা চা অসস্তি ও ক্লান্তি দূর করে, এবং মানসিক চাপ কম করে শরীর ও মন কে করে তোলে সতেজ। আদা তে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে আদার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং আদা হজমে সাহায্য করে, ফলে বদহজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং পেট ব্যথা দূর হয়ে যায়। তাছাড়া ক্যামোমিল চা এবং পিপারমেন্ট চা পেট ব্যথা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- কাঁচা কলা ও আপেল খাওয়া: আপেল এবং কলাতে ফাইবার বিদ্যমান থাকাই আপেল ও কলা খেলে এগুলো পেটের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে এবং বমি ভাব দূর করে। তাছাড়া কাঁচা কলায় বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন বি৬ এবং পটাশিয়াম । এর ফলে কাঁচা কলা সিদ্ধ করে খাওয়ার মাধ্যমে পেট ব্যথা দূর হয়। এবং কাঁচা কলাতে বিদ্যমান থাকা মিনারেল এর ফলে শরীরের কোন পেশিতে টান লাগার ব্যথাও কমাতে সহায়তা করে।
- পুদিনা পাতা ও লেবুর রস: পুদিনাপাতা এবং লেবুর রস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। পুদিনা পাতা ও লেবুর রস সেবনের মাধ্যমে বদহজমের সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং এর ফলে পেট ব্যথা কমে যায়। পুদিনা পাতায় বিদ্যমান রয়েছে ব্যথা নাশক বৈশিষ্ট্য। এজন্য পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া বাচ্চা দিয়ে পান করার মাধ্যমে পেটের ব্যথা দূর করা সম্ভব। লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিডের ফলে কিডনির পাথর জনিত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে থাকে, যার ফলে পেটের ব্যথা দূর হয়। তাছাড়া লেবু হজম হতে সহায়তা করে, ফলে পেট ব্যথা কমে যায়।
- হিটিং প্যাডের ব্যবহার:বর্তমানে পেটের ব্যাথা সহজে কোন ব্যথা কমাতে হিটিং প্যাড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পেটের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে হিটিং প্যাড খুবই উপযোগী। হিটিং প্যাডে পানি থাকে যা বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে চার্জ দিয়ে পরিমিত পরিমানে উষ্ণ গরম করে পেটের যেখানে ব্যথা, সেই স্থানের ব্যবহারের মাধ্যমে পেটের ব্যথা অনেকাংশে কমানো সম্ভব
- পর্যাপ্ত পানি পান করা: অনেক সময় সঠিক পরিমাণে পানি পান করার অভাবে পেটে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে পেটের ব্যাথা দূর করা যায়। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের টক্সিক পদার্থ গুলো বেরিয়ে যায় ফলে পেট ব্যথা কমে যায়।
- দই খাওয়া: পেট ব্যথা করলে দই খাওয়া উচিত। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যার কারণে পেটে ব্যথা দেখে দিতে পারে। দই প্রবায়োটিক খাবার হওয়ার ফলে দই খেলে পেট ব্যথা কমে যায়। ফলে স্বস্তি পাওয়া যায় পেট ব্যথা থেকে। তাছাড়া নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে, পেট ব্যথা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঠান্ডা দই এর সাথে সামান্য লবন এবং অল্প পরিমানে জিরার গুড়া মিশ্রণ করে মসলা দড়ি তৈরি করে খেতে হবে। এতে করে হজমের সমস্যা দূর হবে ফলে পেট ব্যথা কমে যাবে।
- মৌরি চা: পেট ব্যথা কমাতে মৌরি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চায়ের সাথে এক চা চামচ মৌরি এবং তুলসী পাতার মিশ্রণ করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবং ফোটানো হয়ে গেলে ছাকনির দ্বারা ছেকে নিয়ে হালকা মধু মিশিয়ে খেলে পেট ব্যথা দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া মুড়িতে ফাইবার বিদ্যমান থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাও দূর করা যায় । সুতরাং, পেট ব্যথা দূরীকরণে মৌরি চায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
- কিসমিস খাওয়া: কিছু কিসমিস সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে কিসমিস গুলো পিষে খাওয়ার মাধ্যমে পেটের গ্যাস ও জ্বালাপোড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ফলে পেট ব্যথা দূর হয়।
লেখক এর মন্তব্য
উপরিউক্ত সকল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে আমরা জানতে পারলাম যে, বিভিন্ন কারণে
আমাদের পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। আমাদের উচিত সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং
পেট ব্যাথা হওয়ার কারণ ও পেট ব্যথা দূর করার উপায় সম্পর্কে সচেতন থাকা। এবং পেট
ব্যাথা হলে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এবং ব্যথা যদি
তীব্র অনুভূত হয় তাহলে জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। পেট ব্যথা
সহ অন্য যেকোনো সমস্যা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে পোষ্টের নিচে কমেন্ট সেকশনে
মন্তব্য করুন।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url