কীভাবে ১ মাসে সহজে ওজন কমাবেন?
অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বর্তমানে একটি ব্যাপক বড় সমস্যা হয়ে
দাঁড়িয়েছে।এক মাসে সহজে ওজন কমানোর জন্য চর্বি,তেল,চিনি,মিষ্টিজাতীয়
খাবারগুলো পরিহার করে সুষম খাদ্য খেতে হবে,নিয়মিত ব্যায়াম করা লাগবে। আসুন
জেনে নি, কীভাবে ১ মাসে সহজে ওজন কমাবেন?
সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এক মাসের সাধারণত পাঁচ ছয় কেজি ওজন কমানো সম্ভব। এর চেয়ে
বেশি ওজন কমাতে চাইলে তাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং ব্যাপক কষ্ট
করতে হবে। শুধু খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ নয় দৈনন্দিন সকল কার্যক্রমকে একটি নিয়মিত
সুনির্দিষ্ট পন্থায় পরিচালনা করতে হবে।
ভূমিকা
অতিরিক্ত মোটা হওয়া বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া সর্বক্ষেত্রেই বাধার সৃষ্টি করে।
চাকরির ক্ষেত্রে এটি বাধা সৃষ্টি করে। এবং যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই অসুবিধা হয়।
এজন্য সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করে অতিরিক্ত খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ
করার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাছাড়া পুষ্টিকর খাবার যে সকল খাবারে কম
ক্যালোরি থাকে এবং যেগুলো খেলে অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি পায় না সে সকল খাবার খাদ্য
তালিকায় রাখতে হবে। যে সকল খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় সে সকল খাবার পরিহার করতে
হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীর চর্চা করতে হবে। তাহলে শরীর ও মন উৎপন্ন থাকবে এবং
ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
ওজন কমানোর জন্য যে সকল খাদ্য খাওয়া উচিত
- সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে এবং কার্ডিও ব্যায়াম করা লাগবে।যেমন: জগিং, সাইকেলিং
- সকালের নাস্তায় সিদ্ধ ডিমের সাদা অংশ, দুধ, কলা, কাচা বুট খেতে হবে
- কিছুক্ষণ পরপর খিদে লাগলে, শশা খেতে হবে।
- দুপুরে শাকসবজি, মাছ মাংস খেতে হবে হালকা পরিসরে
- বিকেলের নাস্তায় ফলমূল গ্রহন করতে হবে ও পারলে খেলাধুলা করতে হবে।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সর্বনিম্ন ১ ঘন্টা আগে রুটি খেতে হবে।
- ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে হালকা গরম পানির সাথে এক চামচ মধু ও জিরার গুড়া মিশিয়ে পান করতে হবে।
কীভাবে ১ মাসে সহজে ওজন কমাবেন?
আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের ওজন বৃদ্ধি পায় ভুল খাদ্যাভাসের কারনে।তাই ওজন কমানোর জন্য সবার আগে সঠিক খাবার, সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে গ্রহন করা প্রয়োজন।- খাবার থেকে চিনি অপসারণ : ওজন কমাতে চাইলে চিনি পরিহার এর বিকল্প নেই। আপনি যতই ব্যায়াম করুন না কেন, চিনি ছাড়তে না পারলে ওজন কমবে না। চিনিতে প্রচুর ক্যালরি থাকায় চিনি পরিহার করা আবশ্যক।
- ব্যায়াম করা : প্রতিদিন সকালে কার্ডিও করা উচিত।সকালে খাবারের আগে হাটাহাটি করা, হালকা দৌড়ানো, সাইকেল চালানোর মাধ্যমে কার্ডিও করা যায়।তাছাড়া পেট এর ব্যায়াম করা, পুশ আপ,পুল আপ এসবের মাধ্যমেও ক্যালরি বার্ন হয়।সময় পেলে হালকা ব্যায়াম করতে হবে।(সাতার কাটা একটি ভালো ব্যায়াম)
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন : ভাড়াপোড়, তেল জাতীয় খাবার পরিহার করা লাগবে। সুষম খাদ্য গ্রহন করা লাগবে। শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস খাওয়া লাগবে।খাবারে প্রোটিনের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে।সকালে ডিম,দুধ,বাদাম, কলা খেতে হবে।অসময়ে ক্ষুদা লাগলে শশা খেতে পারেন। রাতে রুটি খেতে হবে।
- পর্যপ্ত পরিমানে ঘুমানো প্রয়োজন: অতিরিক্ত রাত জেগে থাকার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।সঠিক সময় মত ঘুমাতে হবে।
- পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ও নফল রোজা রাখা: দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো পড়লে শরীর ও মন সুস্থ থাকে। অতিরিক্ত টেনশন, দুশ্চিন্তা ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিনিয়ত নামাজ কালাম পড়লে সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়।রোজা রাখলে শরীর হালকা হয়।মন সতেজ থাকে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করলে নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়।তাই মাঝে মাজে নফল রোজা করলে তা অতিরিক্ত ওজন বৃষ্টি রোধ করে।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পরিহার: অনেক সময় এমন দেখা যায় যে মানুষ দুশ্চিন্তার ফলে সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। ফলে ব্যতিক্রম খাদ্যাভাসের কারণে নিজের শরীরকে ফিট রাখতে পারে না এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। এজন্য অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পরিহার করে চলা উচিত।
- রাতে তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ করা: ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার গ্রহণ করা উচিত । কারণ যদি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুয়ে পড়েন তাহলে সেটি দ্রুত ওজন বাড়িয়ে দেয় । এবং খাবার গ্রহণের পণ্য থেকে বিশ মিনিট আগে পানি পান করা উচিত যাতে আপনার সঠিকভাবে খাদ্য হজম হয়। খাদ্য তালিকায় জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণরূপে বর্জন করুন।
মেয়েদের ওজন কমানোর সহজ ও কার্যকরী উপায়
ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি, কিভাবে ১ মাসে সহজে ওজন কমাবেন? এখন আমরা জানবো
মেয়েদের ওজন কমানোর জন্য সহজে কি কি কাজ করা যেতে পারে। আসুন এই সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নিন।
- হাঁটা: ওজন কমানোর জন্য হাঁটা একটি জনপ্রিয় ব্যায়াম । একজন মহিলার জন্য এটি খুব সহজ কাজ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। দিনে ৩০ মিনিট হাঁটলে মহিলাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালরি বাড়ন হবে এবং তাদের ওজন কমতে সহায়ক হবে । তাছাড়া এভাবে নিয়মিত হাঁটার ফলে ক্যালোরি হ্রাস পাবে এবং হার্ট ও মন ভালো থাকবে ।
- জগিং বা দৌড়ানো: ব্যায়ামের মধ্যে দৌড়ানো একটি সর্বোত্তম মাধ্যম। দ্রুত ক্যালরি বাড়ন করার জন্য মহিলারা বাসায় ট্রেড মিলে দৌড়াতে পারে অথবা সকাল বেলা রাস্তায় আধা ঘন্টার মতো দৌড়ালে তাদের শরীর পূর্বে তুলনায় হালকা হবে এবং তারা তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে ।
- সাইকেল চালানো: সাইকেল চালানোর পরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি বাড়ানো হয় এবং ওজন কমতে সহায়তা হয়। মহিলারা চাইলে বাসায় সাইকেল চালিয়ে ক্যালোরি বার করে ওজন কমাতে পারে। প্রতিদিন 15 থেকে ২০ মিনিটের মতো সাইকেল চালালে হার্ট ভালো থাকবে এবং ওজন কমবে।
- রোজা রাখা: রোজা রাখলে সারাদিন অতিরিক্ত যে খাবার গ্রহণ করা হয় সে খাবার থেকে বিরত থাকা যায়। ফলে অতিরিক্ত কোন খাবার শরীরে প্রবেশ করে না। তাই সুস্থ থাকার জন্য এবং ওজন কমানোর জন্য রোজা রাখা যেতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা: অনেক মেয়েরা পানি পান করতে চায় না ফলে তারা ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হয়। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল খাওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্যালোরি ঝরাতে সহায়তা হয়।
- ব্ল্যাক কফি ও গ্রিন টি : চিনি ছাড়া ব্লাক কফি খেলে এটি অতি দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে। কারণ কফি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং পেটে চর্বি কমিয়ে দেয়। তাছাড়া গ্রিন টি পান করলে গ্রিন টি তে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কারনে শরীরের চর্বি ঝড়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে।
- কার্বোহাইড্রেট খাবার পরিহার: অতিরিক্ত ওজন থেকে বাঁচার জন্য কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যেমন: পাউরুটি, বিস্কুট, আলু, চিনি ইত্যাদি খাবার শরীরের মেদ বাড়িয়ে দেয় এজন্য এসব খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে দিতে হবে।
লেখক এর মন্তব্য
ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য
আমাদেরকে ওজন বৃদ্ধি নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। আমাদেরকে সব সময় সুষম খাবার
পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা লাগবে। যেকোনো কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে
তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করলে শরীরের ওজন
নিয়ন্ত্রণে থাকে। আশা করি, কীভাবে ১ মাসে সহজে ওজন কমাবেন? এই সম্পর্কে
বুঝতে পেরেছেন। তাই আমাদের সব সময় ওজন নিয়ে সচেতন থাকা জরুরী। এবং ওজন
বৃদ্ধি পেলে সঠিক ডায়েট মেইনটেইন করে এবং শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের
ওজনকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
মিডপয়েন্ট ওয়েবের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url